মাসালায়ে রফউল ইয়াদাইনঃ চূড়ান্ত পর্যালোচনা
সুলাইমান আল উমাইর
বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম
আসসালামু
আলাইকুম। রফউল ইয়াদাইন সম্পরকে হানাফি মত বা ব্যাখ্যা নিয়ে অনেকেই
বর্তমানে এরূপ বলে থাকে যে, হানাফিদের মত বা ব্যাখ্যা সহিহ হাদিস বিরোধী,
সাহাবি এবং তাবেয়িদের আমলের পরিপন্থী। এভাবে একদল লোক সাধারন মানুষকে
বিভ্রান্তির মধ্যে নিপতিত করছেন। তাদের মধ্যে বরতমান আহলে হাদিসগন অন্যতম।
আরেক
দল লোক বিবাদমান দুই মতের লোকদের মধ্যে হানাফিদেরকে এসব বিষয় নিয়ে
ইখতিলাফের জন্য দায়ী মনে করেন। কিন্তু এই ইখতিলাফ উপমহাদেশে সর্বপ্রথম শুরু
করেন আহলে হাদিসরাই।
১৮৭৯ সালের কথা। যখন মুসলমানরা
ছিল ইংরেজদের কবলে পরে নির্যাতিত।সিপাহি বিদ্রহের বেরথতার পরে সবাই যখন
ভগ্নহৃদয়, তখন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়ে বসল লাহোরের মুস্লিম নাম ধারি এক
আলেম। তিনি হলেন মাওলানা হোসেন আহমাদ বাটালভি। যাকে বলা হয় আহলে হাদিসদের
ব্যারিস্টার। তিনি হানাফিদের টার্গেট করে উপমহাদেশের মুসলমানদের ঐক্য
নস্যাৎ করতে একটি লিফলেট প্রচার করল। লিফলেটে এমন ১০ টি আমল তুলে ধরা হল
এবং তা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমান দিতে বলা হল যার উপর হানাফিরা শতাব্দীর
পর শতাব্দী ধরে আমল করে আসছিল। এই দশটি আমলের মধ্যে রফউল ইয়াদাইন না করার
ব্যাপারেও প্রমান চাওয়া হয়েছিল যা সহিহ ও সরিহ হতে হবে। এর উদ্দেশ্য ছিল
মুসলমানদের ঐক্য যেন বিনষ্ট হয় আর এর মাধমে ইংরেজদের ডিভাইড অ্যান্ড রুল
নীতির প্রতিষ্ঠা করা।যাতে হানাফিদের মাঝে আগুন জলে ওঠে আর ইংরেজরা ভালভাবে
দেশ শাসন করতে পারে।মাহমুদ হাসান রহ এর ‘আদিল্লায়ে কামেলা’ নামক গ্রন্থে
বাতালভি সাহেবের ১০ টি চ্যাঁলেঞ্জ এর সমুচিত জবাব প্রদান করা হয়েছে। এই
বইটির সহজিকিকরন করে সাইদ আহমাদ পালন পুরি (দা। বা।) ‘তোহফায়ে আহলে হাদিস’
নামক গ্রন্থ হিসেবে প্রকাশ করেছেন যা বর্তমানে বাংলাদেশে পাওয়া যায়।
রফউল
ইয়াদাইন না করার হাদিসগুলো আমলি ভাবে মুতাওয়াতির।কিন্তু হাত না উঠানোর
হাদিস গুলো অর্থ গতভাবে মুতাওয়াতির।(নায়লুল ফারকাদাইন ফি রফউল ইয়াদাইন)
এর প্রমান ইসলামী বিশের দুই কেন্দ্র তথা মদিনা ও কুফাতে সবার আমল হাত না উঠানর পক্ষে দলিল।
ইমাম
মালিক রহ মদিনাবাসির আমল দেখে হাত না উঠানোর হাদিস গ্রহন
করেছেন।(বিদায়াতুল মুজতাহিদ ১/১৪৩) । এ থেকে একটি জিনিস বিশেষ ভাবে নজরে
পরে যে ইমাম মালিক রহ ইবনে উমার রা এর হাদিসের প্রতি বেশি জোর দেন,এমনকি
মুআত্তা মালিকের বেশিরভাগ হাদিস ই ইবনে উমার রা এর থেকে নাফে রহ এর সুত্রে
মালিক রহ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু হাত উঠানোর ব্যাপারে মালিক রহ ইবনে উমার রা
এর হাদিসকে মাঝহাবে রুপ দেননি।তিনি মদিনাবাসির আমলকে এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য
দিয়েছেন।
আবার কুফার দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, কুফাই এমন শহর যে শহরে কেউ রফউল ইয়াদাইন করতেন না।
মাওলানা আব্দুল হাই লাখনভি মুয়াত্তা মুহাম্মদ এর টিকায় ইমাম মুহাম্মদ ইবনে নাসর মারয়াযি শাফি রহ এর উধ্রিতি উল্লেখ করেনঃ
“আমরা
কোন পুরো শহরবাসী সম্পর্কে এরকম জানি না, যারা সবাই রুকুতে যাওয়ার ও ওঠার
সময় রফউল ইয়াদাইন ছেড়ে দিতেন,শুধু কুফাবাসি এরূপ করতেন”।(আত্তালিকুল
মুমাজ্জাদ পৃষ্ঠা ৯১)
অর্থাৎ কুফা ছাড়া অন্য সকল
শহরে রফুল ইয়াদাইন পক্ষে বিপক্ষে লোক ছিল কিন্তু শুধু কুফার অধিবাসীরাই এমন
ছিলেন যেখানে ফকিহ মুহাদ্দিস থেকে শুরু করে জনসাধারন পরযন্ত কেউই রফুল
ইয়াদাইন করতেন না। সাদ ইবনে আবি অয়াক্কাস রা,আব্দুল্ললাহ ইবনে মাসুদ রা,আবু
মুসা আসআরি রা থেকে শুরু করে কমপক্ষে ৫০০ সাহাবির বাস ছিল এই কুফা নগরিতে
যা সর্বজনস্বীকৃত। আল্লামা আজালি রহঃ এর মতে ১৫০০ সাহাবির কথা উল্লেখ
করেছেন এর মধ্যে আবার ৭০ জন বদরি সাহাবি এবং ৩০০ জন বায়াতে রেযঅয়ানের
ছিলেন।এরা সবাই শুধু তাকবিরে তাহরিমার সময় হাত উঠাতেন, অন্য কথাও নয়।
রাসুল সাঃ এর ওফাতের পর ইলমের তিনটি কেন্দ্র ছিলঃ ১। মদিনা
২।মক্কা
৩।কুফা
মক্কা
মুকাররামার প্রধান শিক্ষক ছিলেন হযরত ইবনে আব্বাস রা, মদিনায় হযরত ইবনে
উমার রা এবং হযরত জায়েদ ইবনে সাবিত রা, এবং কুফায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে
মাসউদ রা। (আলা’মুল মুয়াক্কিঈন)
তাই আল্লমা আনোয়ার
শাহ কাশ্মিরি বলেন, ‘এ কথা অনস্বীকার্য যে,যে আমল যে পরিমান অধিক হয় তার
রেওয়াআতও সে পরিমানে হ্রাস পায়। কেননা অবিছিন্ন আমল নিজেই একটি বড়
শক্তিশালী দলিল। এবং এক্ষেত্রে রেওয়াআতেরও বেশি প্রয়োজন পরে না’।
হানাফিগণ
হাত তোলা প্রমানিত এ কথা অস্বীকার করেন না। কিন্তু যারা বলেন হাত না তোলা
হাদিস দ্বারা প্রমানিত নয়, প্রমানাদির আলোকে হানাফিগণ অবশ্যই তাদের মত
খণ্ডন করতে পারেন।
হাত
না ওঠানোর রেওয়াআত সমুহের মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধ রেওয়াআত হচ্ছে আলকামা রহঃ
এর সুত্রে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা এর হাদিসটি। হাদিসটি নিন্মরুপঃ
১।
257
- حَدَّثَنَا هَنَّادٌ قَالَ: حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ
عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الأَسْوَدِ، عَنْ
عَلْقَمَةَ، قَالَ: قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ: «أَلَا أُصَلِّي
بِكُمْ صَلَاةَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟
فَصَلَّى، فَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ إِلَّا فِي أَوَّلِ مَرَّةٍ»
“হযরত
আলকামা রহঃ বলেন, হযরত ইবনে মাসুদ রা বলেছেন আমি তোমাদেরকে রাসুল সা এর
নামাজ পরে দেখাব কি? একথা বলে তিনি নামাজ পরলেন এবং তাকবিরে তাহরিমা বেতিত
কোথাও রফুল ইয়াদাইন করেননি। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৭৪৮, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২৫৭, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-১৩০৪, সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৬৪৫,১০২৯(ইফাবা), সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২৩৬৩, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৩৬৮১}
ইমাম তিরমিযি রহঃ বলেছেন হাদিসটি হাসান।
হাফিয ইবনে হাযার রহঃ একে সহিহ বলেছেন।
দারে কুতনি,ইবনে কাত্তান রহঃ হাদিস্তিকে সহিহ বলেছেন। (দারে কুতনি)
আর গায়রে মুকাল্লেদ্দের ইমাম ইবনে হাযম রহঃ এই হাদিসকে সহিহ বলেছেন।(আলমুহাল্লা খণ্ড ৪ পৃষ্ঠা ৮৮,আলতালখিসুল হাবির ১/৮৩)
এ হাদিসের সকল রাবি মুসলিমের মানসম্মত।[আল জাওহারুন নাকি ১/১৩৭]
*আবার
অনেকে বলেন,ইমাম তিরমিযি রহঃ আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহঃ এর উক্তি উল্লেখ
করেছেন যে, হাত না তোলার ব্যাপারে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা যে
বলেছেন,’রাসুল সা নামাযে কেবল একবার রফুল ইয়াদাইন করেছেন তারপর আর করেননি’
এই হাদিসটি প্রতিস্তিত নয় কিন্তু
হাত তোলার ব্যাপারে হাদিসটি সুপ্রমানিত ও প্রতিস্থিত।
এর
জবাব হল এই উক্তিটি রফুউ ইয়াদাইন করা শিরোনামে তিরমিযি রহঃ উল্লেখ
করেছেন। আর উক্তিতে যে হাদিসের কথা বলা হয়েছে তা হল অন্য একটি
হাদিস।উক্তিতির দিকে লক্ষ্য করুন।যা মাসুদ রা সরাসরি রাসুল সা এর আমল
অর্থাৎ মারফু সুত্র থেকে বর্ণনা করছেন। এটি উপরোক্ত হাদিস এর মত
নয়।তিরমিযির হাদিসে মাসুদ রা নামাজ পরে দেখিয়েছেন, মুবারক রহঃ এর উক্তিতে
এই হাদিসের বর্ণনা নেই যেটিকে তিনি সুপ্রথিস্তিত নয় বলেছেন এটি হল অই
হাদিস যা তাহাবি রহঃ বর্ণনা করেছেন দেখুন তাহাবি শরিফ প্রথম খণ্ড ১২৫৫ নং
হাদিস এবং এই হাদিসটি সুপ্রথিস্তিত নয়। স্বয়ং আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহঃ
এর সুত্রে সুনানে নাসায়িতে আল্কামা রহঃ এর হাদিসটি বরনিত হএছে। তাই মুবারক
রহঃ এই হাদিসের কথা বলেননি কেননা তার সুত্রেই এই হাদিস বরনিত আছে দেখুন সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৬৪৫,১০২৯(ইফাবা)।(দরসে তিরমিযি প্রাগুক্ত পৃষ্ঠা ৩৯)
তাই
ইমাম তিরমিযি রহঃ আল্কামা সুত্রে প্রাপ্ত হাদিসটি পরবর্তীতে আলাদা
শিরোনামে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, ‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর
(রাফয়ে ইয়াদাইন না করা সংক্রান্ত) হাদীস ‘হাসান’ পর্যায়ে উত্তীর্ণ এবং
অনেক আহলে ইলম সাহাবা-তাবেয়ীন এই মত পোষন করতেন। ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহ. ও
কুফাবাসী ফকীহগণ এই ফতোয়া দিয়েছেন’।
*এই হাদিস সম্বন্ধে অনেকে বলেন এই হাদিসের ভিত্তি আসিম ইবনে কুলাইব এর উপর।আর এটা তার একক বিবরন।
এর জবাব হল আসিম ইবনে কুলাইব মুসলিম শরিফের একজন নির্ভরযোগ্য রাবি।[জাইলায়ি ১/২০৭] তাই তার একক বর্ণনা ক্ষতিকর নয়।
মুসলিম শরিফের ৫৩২৯ নং হাদিসের রাবি হলেন আসিম ইবনে কুলায়েব দেখুন নিচে:
আবু হাতিম বলেন,আসিম ইবনে কুলাইব একজন সালেহ ও সৎ বেক্তি।[তাহযিবুত তাহযিব ৫/৫৫,৫৬]
ইবনে হিব্বান তাকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন, এবং ইবনে মইন ও ইমাম নাসায়ি বলেন, তিনি একজন নির্ভরযোগ্য রাবি।[তাহযিবুত তাহযিব ৫/৫৫,৫৬]
আবু দাউদ রহ বলেন, আসিম ইবনে কুলায়েব ছিলেন কুফাবাসিদের মধ্যে উত্তম বেক্তি।[তাহযিবুত তাহযিব ৫/৫৫,৫৬]
এছাড়া
আবু হানিফা রহঃ হাম্মাদ ইবনে সুলাইমান থেকে ,তিনি ইব্রাহিম নখয়ি
থেকে,তিনি ইব্রাহিম রহঃ আসওয়াদ থেকে উক্ত হাদিসটি বরনিত হয়েছে, দেখুন
মুস্নাদে ইমাম আযম আবু হানিফা রহঃ হাদিস নং ৯৭।
*আরেকটি অভিযোগ অনেকে করেন যে, আসঅয়াদ রহঃ এর সাথে আল্কামা রহঃ এর সাক্ষাত প্রমানিত নয়।
এর জবাব হল আব্দুর
রহমান ইবনে আসঅয়াদ রহঃ ইব্রাহিম নখই রহঃ এর সমকালীন।আর ইব্রাহিম রহঃ এর
শ্রবণ আল্কামা থেকে প্রমানিত।ইমাম মুসলিম এর মতে, বিশুদ্ধতার জন্য
সমকালিনতাই যথেষ্ট। তাই এই হাদিসটি মুস্লিমের শর্ত অনুযায়ী সহিহ। তাছাড়া
ইমাম আবু হানিফা আসঅয়াদের পরিবর্তে ইব্রাহিম নখয়ি রহঃ থেকে বর্ণনা করেছেন
যা উক্ত হাদিসকে সমরথন করে।(দরসে তিরমিযি ২/৪১)
*অনেকে এরকম বলেন যে মাসুদ রা যেরকম রুকুতে তাতবিক রহিত হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে জানতে পারেননি তেমনি হাত উত্তলনের বিষয়েও অজ্ঞ ছিলেন।
এর উত্তরে বলা হবে,
তিনি বছরের পর বছর রাসুল সা এর পেছনে নামাজ আদায় করেছেন,অথচ ইবনে উমার রা
তখন শিশুদের কাতারে দাঁড়াতেন।তাই এরূপ প্রমানহিন কথা বলা এক প্রকার ধৃষ্টতা
ছাড়া আর কিছুই নয়।
আল্লামা আহমাদ মহাম্মদ শাকের রহঃ এই হাদিসের অভিযগ খণ্ডন করতে গিয়ে বলেনঃ
এই
হাদিসের সনদ সহিহ। ইবনে হাযমসহ অনেক হাফেযে হাদিস একে সহিহ বলেছেন। অন্নরা
এতে যেসব ইল্লত বা ত্রুটি সাব্যস্ত করেছেন সেগুল আদৌ কোন ইল্লতি নয়।(শরহু
জামি তিরমিযি ২/৪১)
আওযাই
রহঃ ও আবু হানিফা রহঃ এর বাহাসে ইমাম আবু হানিফা রহঃ তার উক্ত হাদিসের
রেওয়াআতকে প্রাধান্য দিয়েছেন রাবিদের ফিকহের ভিত্তিতে। কেননা ফিকহবিদরাই
হাদিসের সঠিক মর্ম সম্পর্কে অবগত। ইমাম তিরমিযি রহ বলেন,হাদিসের আসল
অর্থের যথার্থ মর্ম ইসলামী আইনবিদরাই সর্বাধিক জানেন।–(তিরমিযিঃ১/১১৮) আর
আওযাই রহঃ ইবনে উমার রা এর হাদিসকে যেটি সালিম তার পিতা হযরত আব্দুল্লাহ
ইবনে উমার রা থেকে বর্ণনা করেছেন সনদের স্রেস্থত্তের ভিত্তিতে প্রাধান্য
দিয়েছেন।
তাই ইবনে মাসুদ রা হাদিসের সব রাবি ফকিহ। আর হাদিসে মুসালসাল বিল ফুকাহা অন্যান্য হাদিসের তুলনায় অগ্রগণ্য।
অধিকাংশ ফকিহ রফুল ইয়াদাইন করতেন না।
আবু বকর ইবনে আইয়াশ রহঃ বলেনঃ আমি কোন ফকিহ কে কখনও প্রথম তাকবির বেতিত হাত তুলতে দেখিনি।(তাহাবি ১/৪৩১)
আহলে হাদিসদের অভিযোগ, হাদিসটি মালুল এবং সুফিয়ান সাওরি রহ মুদাল্ললিস।
তাদের অভিযোগ সুফিয়ান সাওরির উস্তাদ আসিম ইবনে কুলায়েব রহ এর আরেক ছাত্র
ইবনে ইদ্রিসের কিতাবে ثُمَّ لَا يَعُودُ এই অতিরিক্ত অংশটি নেই, তাই হাদিসটি মালুল।
আমাদের উলামাদের জবাব এই যে, ইবনে ইদ্রিস থেকে সুফিয়ান সাওরি যে বড় ফকিহ ও ইমাম তা বলাই বাহুল্য।
তাই ভুল হলে ইবনে ইদ্রিসের কিতাবে উল্লেখিত হাদিসের হতে পারে সুফিয়ান সাওরির নয়।
তিনিই শুধু এই অতিরিক্ত কথাটি বর্ণনা করেননি বরং ইমাম আবু হানিফা থেকে এক
ভিন্ন সুত্রে 'তারপর পুনরায় আর হাত উত্তোলন করতেন না' কথাটি রয়েছে।[দেখুন
মুস্নাদে ইমাম আবু হানিফা ৯৭ নং হাদিস]
এছাড়াও অতিরিক্ত বর্ণনাটি ক্ষতিকর নয় প্রকৃতপক্ষে তিনি উক্ত কথার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছেন মাত্র।
অতিরিক্ত কথাটা ছারাও আমাদের আমল প্রমানিত হয়।
কেননা তিরমিযির বরননায় আছে 'তিনি শুধু প্রথম বারই দু হাত উত্তোলন করলেন'।[তিরমিযি হাদিস নং ২৫৭]
মানে এরপর আর তা উঠান নি শুধু প্রথমবার উঠিয়েছেন এটা ত বলার অপেক্ষা রাখে না উক্তি দ্বারাই তা পরিষ্কার।
এই কথাটিই নাসাইর সনদে উল্লেখ আছে সুফিয়ান সাওরির বর্ণনায়।
আরেকটি অভিযোগ তিনি(সুফিয়ান সাওরি) তাদলিস করেন যা ইবনে মইন বলছেন। [আবু হাতিম এর আজ্জরাহ অয়াততাদিল ৪/২২৫]
কিন্তু
প্রশ্ন হল, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদের হাদিস বর্ণনা করতে গিয়ে সুফিয়ান সাওরি
রহ তাদলিস করেছেন তার প্রমান কি? এই হাদিসে তো তাদলিস করা হয় নি। তাদলিসের
প্রমান দিন।
এটা সর্বজন স্বীকৃত কথা যে রাবি সিকাহ ও হুজ্জত তার তাদলিস গ্রহনজজ্ঞ।সুফিয়ান সাওরির মত রাবির বেলায় ত কথাই নেই। তারা ত কথা লুকিয়েছেন, ইবনে মইন রহ সুফিয়ান সাওরি সম্বন্ধে বলেছেন,
সুফিয়ান সাওরি রহ সিকাহ।[ জরাহ তাদিলঃ আবু হাতিম ৪/২২৫]
আরও বলেছেন,
সুফিয়ান রহ আমিরুল মুমিনিন ফিল হাদিস। [ জরাহ তাদিলঃ আবু হাতিম ৪/২২৫]
তাদলীস বলার দ্বারা কি ইয়াহইয়া বিন মাঈন সুফিয়ান সাওরীর বদনাম করতে
চাচ্ছেন? না এটা সম্ভব নয়। কারণ যিনি তাকে বলছেন আমীরুল মুমিনীনা ফিল
হাদীস, আবার বলছেন সিক্বা। তিনি আবার তাদলীস করার কথা বলে বদনাম করেন
কিভাবে? আসলে তাদলীসের অনেক প্রকার আছে। এখানে দোষনীয় তাদলীস উদ্দেশ্য নয়।
আমাদের
প্রশ্ন হল যখন সুফিয়ান সাওরি রহ জোরে আমিন বলার হাদিস বর্ণনা করেন তখন তো
আপনারা সুফিয়ান রহ কে শুবা রহ এর চেয়েও অধিক স্মরণশক্তির অধিকারি হিসেবে
গণ্য করেন অথচ শুবা রহ হাদিস শাস্ত্রে শীর্ষ নেত্রিত্তের অধিকারী, এই
তারতম্য আপনারা কিসের ভিত্তিতে করেন?সুফিয়ান রহ সম্বন্ধে আপনাদের অভিযোগ
জোরে আমিন বলা বিষয়ে আপনাদের বিরুদ্ধে আমাদের উত্তর, ব্যাপারটা হৃদয়ঙ্গম
করুন।
২।
হযরত
বারা ইবনে আযিব (রা) বলেন- রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম )
যখন নামাজ আরম্ভ করতেন তখন তার হস্তদ্বয় কর্ণদ্বয় পর্যন্ত উত্তোলন করতেন
। অতঃপর আর তা করতেন না । [ সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৭৫০, মুসনাদে আবী
ইয়ালা, হাদীস নং-১৬৮৯, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৪৫৫ ]
এই হাদিসের ব্যাপারে বলা হয় যে, হাদিসটিকে দাউদ রহঃ সহিহ নয় বলেছেন।
এর জবাব হল দাউদ রহঃ এই হাদিসটিকে তিনটি সুত্রে বর্ণনা করেছেন।
প্রথম দুটি সুত্রে হাদিসটি নির্ভর করে ইয়াযিদ ইবনে আবু যিয়াদের উপর।
আরেকটি সুত্রে এটি নির্ভরশীল আব্দুর রহমান ইবনে আবু লায়লার উপর।
ইমাম
আবু দাউদ প্রথম দুই সুত্রের হাদিস সম্বন্ধে নিরব ছিলেন শুধুমাত্র যেটি
আব্দুর রহমান ইবনে আবু লায়ালা থেকে বর্ণিত সেটিকে সহিহ নয় বলেছেন কেননা
তিনি দুর্বল।সুতরাং প্রথম দুই সুত্র অনুযায়ী হাদিসটি সহিহ।(দরসে তিরমিযি
২/৪২)
আব্দুর রহমান ইবনে আবি লায়লার হাদিসটিও কমপক্ষে হাসান পর্যায়ের।[ইলাউস সুনান ২/৪২৭]
আবার
মুল পাণ্ডুলিপিতে আবু দাউদ এর এই উক্তি নেই। শুধুমাত্র মুজতবায়ি নোসখায় এই
মন্তব্বের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তাই এ ব্যাপারে সন্দেহ থেকেই যায় যে এটি
দাউদ রহঃ এর উক্তি কিনা।(ইযাহুল মুসলিম ২/১২৪)
শায়খ আলবানী লিখেছেন, والحق أنه حديث صحيح و إسناده صحيح علي شرط مسلم ولم نجد لمن أعله حجة يصلح التعلق بها و رد الحديث من أجلها
অর্থাৎ
সত্য কথা হলো, হাদীসটি সহীহ। হাদীসের সনদ ইমাম মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী
সহীহ। যারা এই হাদীসের উপর অভিযোগ করেছে, তাদের এমন কোন অভিযোগ দেখিনি যা
এই হাদীসের উপর আরোপিত হতে পারে এবং যার কারণে হাদীসটি প্রত্যাখ্যাত হবে।
[ মেশকাতুল মাসবিহ, তাহকীক, শায়খ আলবানী, খ.১, পৃ.২৫৪।]
আলবানী
সাহেব তার আবু দাউদ শরীফের তাহকীকে লিখেছেন, فالحق أنه حديث صحيح ولم
نجد في كلماتهم ما ينهض علي تضعيف الحديث অর্থাৎ যারা হাদীসটির উপর
অভিযোগ করেছে, তাদের এমন কোন অভিযোগ পাইনি যার দ্বারা হাদীসটি যয়ীফ বলা
যাবে। বরং সত্য কথা হলো, হাদীসটি সহীহ। [সহীহু সুনানি আবি দাউদ, পৃ.৩৩৮,
হাদীস নং ৭৩৩]
অত:পর, আলবানী সাহেব এই হাদীসের উপর যারা অভিযোগ করেছে, তাদের অমূলক অভিযোগগুলোর উত্তর দিয়েছেন এবং সেগুলো খণ্ডন করেছেন।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, আহলে হাদীস আলেম আতাউল্লাহ সাহেব তার তালি’কাতুস
সালাফিয়্যা আলান নাসায়ি কিতাবে হাদীসটি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। এবং
বলেছেন, ইনসাফের কথা হলো হাদীসটি সহীহ। (তা’লিকাতুস সালাফিয়্যা আলান
নাসায়ি, খ.১, পৃ.১২৩)।
৩।
عن ابن عباس قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ترفع الايدى فى سبعة مواطن،
افتتاح الصلاة، واستقبال البيت و الصفا والمروة والموقفين وعند الحجر،
(مصنف ابن ابى شيبة، رقم الحديث-2465)
হযরত ইবনে
আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ বলেছেন-সাতটি জায়গায় হাত তুলতে হবে,
১-নামাযের শুরুতে। ২-কাবা শরীফের সামনে আসলে। ৩-সাফা পাহাড়ে উঠলে।
৪-মারওয়া পাহাড়ে উঠলে। ৫-আরাফায়। ৬-মুযাদালিফায়। ৭-হাজরে আসওয়াদের
সামনে। {মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৪৬৫, আল মু’জামুল কাবীর,
হাদীস নং-১২০৭২,মাযমাউয জাওয়াএদ ২/১০৩,সুনানে বায়হাকী-৫/৭২-৭৩}
ইমাম
তাবরানি মারফু সূত্রে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম নাসায়ি থেকে। ইমাম
নাসায়ি থেকে প্রসিদ্ধ আছে যে, তিনি কোন অগ্রহনযোগ্য হাদিস বর্ণনা করেন না,
না কোন অনিরভরযোগ্য রাবি থেকে তা বর্ণনা করেন। সুতরাং হাদিসটি গ্রহন যোগ্য।
৪।
হাফিয ইবনে হাযার আস্কালানি রহঃ ‘আদ দিরায়া ফি তাখরিযি আহাদিসিল হিদায়া’
তে হযরত আব্বাদ ইবনে যুবায়ের রহঃ এর মারফু রেওয়াআত বর্ণনা করেন,
‘রাসুলুল্লাহ
সাল্লালাহু আলাইহি ওআ সাল্লাম যখন নামাজ শুরু করতেন তখন নামাজের শুরুতে
হস্তদয় উঠাতেন।অতঃপর নামাজ শেষ করা পর্যন্ত আর হস্তদয় উত্তলন করতেন
না।‘[বায়হাকি এই হাদিসটি খিলাফিয়াতে বর্ণনা করেছেন-নাসবুর রায়াহ১/৪০৪]
শাহ
সাহেব রহঃ বলেছেন এর সমস্ত রাবি নির্ভরযোগ্য।কিন্তু যুবায়ের রহঃ তাবীঈ।
হাদিসটি মুরসাল। মুরসাল হাদিস আমাদের ও জুমহুরের মতে প্রমান।
৫।
قال أخبرني سالم بن عبد الله عن أبيه قال : رأيت رسول الله صلى الله عليه و
سلم إذا أفتتح الصلاة رفع يديه حذو منكبيه وإذا أراد أن يركع وبعد ما يرفع
رأسه من الركوع فلا يرفع ولا بين السجدتين (مسند الحميدى، أحاديث عبد الله
بن عمر بن الخطاب رضي الله عنه، رقم الحديث-614)
অনুবাদ-হযরত
সালেম বিন আব্দুল্লাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন-আমি রাসূল
সাঃ কে দেখেখি, তিনি যখন নামায শুরু করতেন তখন কাঁধ বরাবর হাত উঠাতেন। আর
যখন রুকু করতে চাইতেন এবং রুকু থেকে উঠতেন, তখন হাত উঠাতেন না। দুই সেজদার
মাঝেও না। {মুসনাদুল হুমায়দী, হাদীস নং-৬১৪}
৬।আসওয়াদ রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
আমি
হযরত ওমর রাঃ-কে দেখেছি, তিনি শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফয়ে ইয়াদাইন
করতেন, পরে করতেন না।রাবি জুবাইর ইবনে আদি রহঃ বলেনঃ এবং আমি ইব্রাহিম রহঃ
এবং শাবি রহঃ কেও অনুরুপ করতে দেকেছি। ’ (তাহাবী: ১/১৬৪), ( তহাবি ১/৪৩০
হাদিস নং ১২৬৯ [ইফাবা])
তাহাবি রহঃ বলেনঃ এটা সহিহ
হাদিস। যেহেতু এর ভিত্তি হাসান ইবনে আইয়াশ রহঃ এর উপর এবং তিনি নির্ভরযোগ্য
প্রামাণ্য ও হুজ্জত রাবি।ইয়াহইয়া ইবনে মইন রহঃ তাকে নিরভরযজ্ঞ বলেছেন।
(তাহাবী: ১/১৬৪,,মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ১/২৩৭),( তহাবি ১/৪৩০ হাদিস নং
১২৬৯ [ইফাবা])
আল্লামা যায়লায়ী রহঃ এই হাদীসকে
সহীহ বলেছেন। সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী
রহ. এই বর্ণনার সকল রাবীকে ছিকাহ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন। আলজাওহারুন নাকী
গ্রন্থে বলা হয়েছে এই হাদীসের সনদ সহীহ মুসলিমের সনদের মতো শক্তিশালী।
৭। হযরত আলী (রা) নামাযে প্রথম তাকবীরে হাত উঠাতেন এরপর আর হাত উঠাতেন না। (সুনানে বায়হাকী : ২/৮০, তাহাবি ১/৪২৬ হাদিস নং ১২৫৯,৬০)
আল্লামা
যায়লায়ী রহ. বর্ণনাটিকে সহীহ বলেছেন। সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যকার
আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রহ. এই বর্ণনার সকল রাবীকে ছিকাহ (নির্ভরযোগ্য)
বলেছেন। সহীহ বুখারীর অপর ভাষ্যকার আল্লামা আইনী রহ. বলেন, “এ সনদটি সহীহ
মুসলিমের সনদের সমমানের।
(নাসবুর রায়াহ : ১/৪০৬, উমদাতুল কারী :৫/২৭৪, দিরায়াহ : ১/১১৩)
এছাড়াও,
ইবনে ইসহাক রহঃ বলেনঃ ‘ইবনে মাসউদ রা এবং হযরত আলী রা এর শিস্যগন কেবল
তাকবিরে তাহরিমা বেতিত হাত উত্তলন করতেন না’। আবি শাইবা এর সনদ সহিহ
বলেছেন।(মুসান্নাফে আবি শাইবা ১/১৩৯)
৮।আসওয়াদ রহ. বলেছেন-
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন, এরপর আর করতেন না।
(জামউল মাসানীদ)
৯।ইব্রাহিম
রহঃ বলেনঃ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা সালাতের শুরু বেতিত কোথাও হাত তুলতেন
না।(তাহাবি ১/৪২৯ হাদিস নং ১২৬৮,মুসান্নাফে আবি শাইবা ১/২৩৬,মুসান্নাফে
আব্দুর রাযযাক ২/৭১)
৯।মুজাহিদ রহ. বলেন-
আমি আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর পিছনে নামায পড়েছি। তিনি প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্য সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন না।
(তাহাবী : ১/১৬৩, ইবনে আবী শাইবা : ২/৪১৮ হাদীছ নং ২৪৬৭ [শায়খ আওয়ামা দা.বা.
তাহক্বীআল্লামা তুরকুমানী রহ. বলেছেন, এ বর্ণনার সনদ সহীহ
(আল-জাওহারুন নাকী)
এর সনদ সহিহ ।[তাহাবি ১/১০৮]
যারা
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা এর হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করেন,তাদের সেই হাদিস
এর পরিপন্থী আমল তিনি নিজেই করেছেন, এটা শুধু তখনই সম্ভব যখন তার কাছে রফুল
ইয়াদাইন রহিত প্রমানিত হয়।
ইবনে উমার রা থেকে রফুল ইয়াদাইন বিষয়ে যেসব হাদিস আছে তা অস্পষ্ট।কেননা তার থেকে বিভিন্ন রেওয়ায়াত পাওয়া যায়।
বায়হাকি
রহঃ খিলাফিয়াতে মালিক রহঃ এর সুত্রে বর্ণনা করেন,ইবনে উমার রা বলেন, রাসুল
সা প্রথম তাকবির বেতিত রফুল ইয়াদাইন করতেন না।(নসবুর রায়াহ ১/২১০)
এছাড়া ইমাম মালিক রহঃ আলমুদানাওয়াতুল কুবরা গ্রন্থে ইবনে উমার রা থেকে মারফু হাদিস উল্লেখ করেছেন যেখানে রফুল ইয়াদাইনের কথা নেই।
এছারা
সহিহ বুখারি ১/১০২ এ চার স্থানে ইবনে উমার রা থেকে ,উভয় সিজদার
মাঝখানেও(আবু দাউদ ১/১০৮ সুনানে নাসায়ি ১/১৭২০, সিজদায় যাওয়ার সময়,( নাসায়ি
১/১৬৫),প্রতিবার উচু নিচু হয়ার ক্ষেত্রে (ইবনে মাজাহ) রফুল ইয়াদাইন এর
বিবরন পাওয়া যায়।
ইমামগন জথা শাফি রহঃ তিন স্থানে গ্রহন করেছেন,
অর্থাৎ তিনি রহিতের দিকেই গেছেন, কেননা সিজদা সিজদায় যাওয়ার সময়, ও সিজদা
থেকে ওঠার সময় রফুল ইয়াদাইন তিনি রহিত মনে করেন।
গভির
ভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় আস্তে আস্তে নামাজ প্রশান্তির ও স্থিরতার দিকেই
গেছে। প্রথমে নামজে কথা বলা জায়েজ ছিল পরবর্তীতে রহিত,এদিক অদিক তাকান
জায়েজ ছিল তাও রহিত হয়ে যায়, এভাবে প্রথম দিকে প্রচুর পরিমান রফুল ইয়াদাইন
জায়েজ ছিল তারপর তা হ্রাস করা হয় এবং পাচ স্থানে তা বিধিবদ্ধ হয়ে যায়,
তারপর চার, তারপর শুধু তাকবিরের সময় তা অবশিষ্ট থেকে যায়। এর উদ্দেশ্য
নামাযে স্থিরতা ও ধিরতা আনয়ন। কেননা কুরআন বলছেঃ ‘আল্লাহর ওয়াস্তে
ধিরস্থিরভাবে নামাযে দাড়াও’
১০।ইবরাহীম নাখায়ী রহঃ বলেন-
নামাযের শুরু রাফয়ে ইয়াদাইন করার পর অন্য কোথায় রাফয়ে ইয়াদাইন করো না
(জামিউস মাসানীদ : ১/৩৫৩)
১১।মুগিরা
রহঃ বলেনঃআমি একবার ইব্রাহিম রহঃ কে অয়ায়িল রা এর হাদিস সম্পর্কে বললাম
তিনি নবি করিম সা কে দেখেছেন তিনি সালাতের শুরুতে এবং রুকুর সময় এবং রুকু
থেকে মাথা উথাবার সময় হাত তুলতেন। ইব্রাহিম রহঃ বল্লেন,অয়ায়িল রা তাকে
একবার এরূপ করতে দেখে থাকেন তাহলে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা তাকে পঞ্চাশ
বার এরূপ না করতে দেখেছেন।(তাহাবি ১/৪২৫ ইফাবা)
এখানে অয়ায়িল ইবনে হুযর রা এর হাদিসের উত্তর দেওয়া হয়েছে।
আরেকটি ব্যাপারে অনেকে বলেন,তাহলে বুখারি রহঃ কি ভুল বলল। তিনি তো রফুল ইয়াদাইন নিয়ে একটি বইই লিখল।
এর
উত্তরে বলা হবে,তিনি মুহাদ্দিস ছিলেন,মুফতি বা ফকিহ নন।ইমাম আবু হাফস
কাবির রহঃ তাকে ইজতিহাদ করতে নিষেধ করেছিলেন,কিন্তু তিনি ফতোয়া দিলেন, যে
শিশুর দুধপান কালিন সময়ে সে যদি কোন বকরির দুধ পান করে তাহলে দুধ সম্পর্ক
স্থাপন হয়ে যাবে। এতে করে বুখারার আলেমরা তার উপর অসন্তুষ্ট হন।এ ব্যাপারে
দেখুন ফাতহুল কাদিরঃ ৩/৩২০ –কিতাবুর রিযা তারিখুল খামিস ২/৩৮২
আল্লামা
ইবনে হাযার মক্কি শাফী রহ আল খাইরাতুন হিসানে ৭০ পৃষ্ঠায় লিখেনঃ ইমাম
বুখারি রহ আমিরুল মুমিনিন ফিল হাদিস ছিলেন , কিন্তু ফিকহের ব্যাপারে তিনি
অবশ্যই দুর্বল ছিলেন। বস্তুত প্রতিটি শাস্ত্রের জন্যই আলাদা আলাদা মনিষী ছিলেন।
তাই তিনি ফিকহের ক্ষেত্রে অনুসরনযোগ্য নন।
এছারাও তিনি শাফি মাজহাবের ছিলেন।[দ্রষ্টব্য-তাবাক্বাতে শাফেয়ীয়্যাহ-৩/২, আল হিত্তাহ-১২১,আল ইনসাফ=৬৭,,আবজাদুল উলুম—৮১০ }
শাফি মাঝহাবে যেহেতু রফুল ইয়াদাইন রয়েছে সেহেতু তিনি এর পক্ষে বাহাস করতেই পারেন।
রফউল
ইয়াদাইন নিয়ে সাহাবিদের যুগ থেকেই মতপার্থক্য দেখা যায়। কিন্তু এই ইখতিলাফ
ছিল ইখতিলাফে মুবাহ। অর্থাৎ রফউল ইয়াদাইন নিয়ে ইখতিলাফ জায়েজ নাজায়েজ নিয়ে
নয় বরং উত্তম অনুত্তম নিয়ে।
ইবনুল কাইয়্যিম রাহ.
জোরে আমিন বলার প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা ইখতিলাফে মুবাহর অন্তর্ভুক্ত, যেখানে
কোনো পক্ষেরই নিন্দা করা যায় না। যে কাজটি করছে তারও না, যে করছে না তারও
না। এটা নামাযে রাফয়ে ইয়াদাইন করা ও না-করার মতোই বিষয়।’
وهذا من الاختلاف المباح الذي لا يعنف فيه من فعله ولا من تركه وهذا كرفع اليدين في الصلاة وتركه
(যাদুল মাআদ ১/৭০, মিসর ১৩৬৯ হি., কুনূত প্রসঙ্গ)
বক্তব্বের
শেষে তিনি বললেন যে, রফউল ইয়াদাইন যেমন ইখতিলাফে মুবাহ তেমনি আমিন জোরে বা
আস্তে বলার বেপারটিও ইখতিলাফে মুবাহ। এ নিয়ে কোন পক্ষেরই নিন্দা করা যায়
না।
ইমাম হুমাম রহঃ বলেনঃ তুমুল তর্ক বাহাসের পর
প্রমান সিদ্ধ কথা এই যে উভয় রেওয়াআতি রাসুল সা থেকে প্রমানিত।সুতরাং
বইপরিত্তের ক্ষেত্রে, প্রাধান্য দেওয়ার প্রয়োজন পরবে।(ফাতহুল কাদির ১/২৭০)
আনোয়ার
কাস্মিরি শাহ বলেনঃ উভয়ক্ষেত্রেই নিরবিছিন্ন ভাবে আমল হয়ে আসছে সাহাবি,
তাবীঈ ও তাবে তাবীঈ দের যুগ থেকেই তবে মতপারথক্ক হল কোনটি উত্তম(নাইলুল
ফাকাদাইন)
সাঈদ ইবনে জুবাইর রা রফে ইয়াদাইনের রহস্য
বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ রফে ইয়াদাইনের উদ্দেশ্য নিছক মানুশের নামাজের
সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা।(নাইলুল ফারকাদাইন)
সাহাবি রা এর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি থেকে বিরত ছিলেন।
আল্লামা ইবনে আবদুল বার রহ. রাফয়ে ইয়াদাইন সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামের অবস্থান বর্ণনা করেছেন-
হযরত
হাসান রা. সাহাবায়ে কেরামের কর্মনীতি সম্পর্কে বলেছেন, ‘তাদের মধ্যে যারা
রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন তারা রাফয়ে ইয়াদাইন পরিত্যাগকারীদের উপর আপত্তি
করতেন না।
এ থেকে বোঝা যায়, রাফয়ে ইয়াদাইন জরুরি কিছু নয়।
(আত-তামহীদ : ৯/২২৬)
স্বয়ং
রাসুল সা এর প্রিয় নাতি হাসান রা এর উক্তি থেকেই বঝা যায় রফউল ইয়াদাইন করা
বা না করা নিয়ে আপত্তি করার কিছু নেই। কেননা সাহাবি রাদিয়াল্লাহু আনহুম এ
ব্যাপারে ইখতিলাফে জড়াননি। কিন্তু বর্তমানে আহলে হাদিস ভাইরা ছাড়াও অনেকে
এরকম রএছেন তারা এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেন এটা সাহাবীদের আমলের পরিপন্থী।
এই
প্রবন্ধটি রফুল ইয়াদাইন প্রমানিত নয় বলে না, কিন্তু রফুল ইয়াদাইন না করাও
প্রমানিত বলে। কিন্তু যারা বলে রফুল ইয়াদাইন না করা প্রমানিত নয়, এবং যারা
রফুল ইয়াদাইন না করে আসছেন হঠাৎ তাদের আমল সহিহ কিনা এই বিষয়ে সন্দিহান হয়ে
পরেছেন তাদের জন্য আমি এই অধম আল্লাহ তা আলার ইচ্ছায় প্রবন্ধটি লিখলাম,ভুল
ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।
আসসালামু আলাইকুম। [sourse- clicksgis]
more [-]= http://cellectionoffacebook.blogspot.in/2014/01/blog-post_3413.html
more [-]= http://cellectionoffacebook.blogspot.in/2014/01/blog-post_3413.html
No comments:
Post a Comment