Saturday 26 December 2015

কল্যাণের দিকে আসো

জোরে আমীন বলার ছহীহ হাদীছ সমূহ

প্রশ্ন : সুরা ফাতিহার শেষে জোরে আমিন বলার কোনো হাদীস আছে?
জোরে আমীন বলার ছহীহ হাদীছ সমূহ
জোরে আমীন বলার ছহীহ হাদীছ সমূহ :
সরবে আমীন বলার একাধিক ছহীহ হাদীছ রয়েছে।
(1) عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ إِذَا قَرَأَ وَلاَ الضَّالِّيْنَ قَالَ آمِيْنَ وَرَفَعَ بِهَا صَوْتَهُ.
(১) ওয়ায়েল ইবনু হুজর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন ‘গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায য-ল্লীন’ বলতেন, তখন তিনি আমীন বলতেন। তিনি আমীনের আওয়াযটা জোরে করতেন।[1]
(2) عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ قَرَأَ غَيْرِ الْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّيْنَ فَقَالَ آمِيْنَ وَمَدَّ بِهَا صَوْتَهُ.
(২) ওয়ায়েল ইবনু হুজর (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) যখন ‘গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায য-ল্লীন’ বলতেন তখন তাকে আমীন বলতে শুনেছি। তিনি আমীনের আওয়ায জোরে করতেন।[2] ইমাম তিরমিযী (রহঃ) বলেন,
وَبِهِ يَقُوْلُ غَيْرُ وَاحِدٍ مِنْ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ وَالتَّابِعِيْنَ وَمَنْ بَعْدَهُمْ يَرَوْنَ أَنَّ الرَّجُلَ يَرْفَعُ صَوْتَهُ بِالتَّأْمِيْنِ وَلَا يُخْفِيْهَا وَبِهِ يَقُوْلُ الشَّافِعِيُّ وَأَحْمَدُ وَإِسْحَقُ.
‘রাসূলের ছাহাবী, তাবেঈ এবং তাদের পরবর্তী মুহাদ্দিছগণের মধ্যে অনেকেই এই কথা বলেছেন যে, মুছল্লী আমীন জোরে বলবে, নীরবে নয়। ইমাম শাফেঈ, আহমাদ ও ইসহাক্ব এ কথাই বলেছেন’।[3]
(3) عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ أَنَّهُ صَلَّى خَلْفَ رَسُوْلِ اللهِ فَجَهَرَ بِآمِيْنَ.
(৩) ওয়ায়েল ইবনু হুজর (রাঃ) একদা রাসূল (ছাঃ)-এর পিছনে ছালাত আদায় করেন। তখন রাসূল (ছাঃ) জোরে আমীন বলেন।[4]
(4) عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ النَّبِيَّ قَالَ إِذَا أَمَّنَ الْإِمَامُ فَأَمِّنُوْا فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ تَأْمِيْنُهُ تَأْمِيْنَ الْمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَقَالَ ابْنُ شِهَابٍ وَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَقُوْلُ آمِيْنَ.
(৪) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘ইমাম যখন আমীন বলবেন, তখন তোমরা আমীন বল। কারণ যার আমীন ফেরেশতাদের আমীনের সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। ইবনু শিহাব বলেন, রাসূল (ছাঃ) আমীন বলতেন।[5]
(5) عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ قَالَ إِذَا قَالَ الْإِمَامُ غَيْرِالْمَغْضُوْبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّيْنَ فَقُوْلُوْا آمِيْنَ فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ قَوْلُهُ قَوْلَ الْمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ.
(৫) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ইমাম যখন ‘গাইরিল মাগযূবি আলাইহিম ওয়ালায য-ল্লীন’ বলবেন, তখন তোমরা ‘আমীন’ বল। কারণ যার কথা ফেরেশতাদের কথার সাথে মিলে যাবে, তার পূর্বের সকল পাপ ক্ষমা হয়ে যাবে’।[6] অন্য হাদীছে এসেছে, তোমরা আমীন বল আল্লাহ তোমাদের দু‘আ কবুল করবেন।[7] অন্য বর্ণনায় আছে, ক্বারী যখন আমীন বলবেন, তখন তোমরা ‘আমীন’ বল।[8]
ইমাম বুখারী (রহঃ) অনুচ্ছেদ রচনা করে বলেন, بَابُ جَهْرِ الْإِمَامِ بِالتَّأْمِيْنِ وَقَالَ عَطَاءٌ آمِيْنَ دُعَاءٌ أَمَّنَ ابْنُ الزُّبَيْرِ وَمَنْ وَرَاءَهُ حَتَّى إِنَّ لِلْمَسْجِدِ لَلَجَّةً... ‘ইমামের উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলা অনুচ্ছেদ। আত্বা বলেন, আমীন হল দু‘আ। ইবনু যুবাইর এবং তার পিছনের মুছল্লীরা এমন জোরে আমীন বলতেন, যাতে মসজিদ বেজে উঠত..’। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন- بَابُ جَهْرِ الْمَأْمُوْمِ بِالتَّأْمِيْنِ ‘মুক্তাদীর উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলা অনুচ্ছেদ’।[9]
জ্ঞাতব্য : অনেকে দাবী করেন, উক্ত হাদীছগুলোতে আমীন জোরে বলার কথা নেই। অথচ হাদীছে বলা হয়েছে ‘যখন ইমাম আমীন বলবে তখন তোমরা আমীন বল’। তাহলে ইমাম ‘আমীন’ জোরে না বললে মুক্তাদীরা কিভাবে বুঝতে পারবে এবং কখন আমীন বলবে? তাছাড়া মুছল্লীদের আমীনের সাথে ফেরেশতাদের আমীন কিভাবে মিলবে? অন্য হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ مَا حَسَدَتْكُمُ الْيَهُوْدُ عَلَى شَيْءٍ مَا حَسَدَتْكُمْ عَلَى السَّلاَمِ وَالتَّأْمِيْنِ.
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা ‘সালাম’ ও ‘আমীন’ বলার কারণে ইহুদীরা তোমাদের সাথে সবচেয়ে বেশী হিংসা করে’।[10]
ইহুদীরা যদি আমীন না শুনতে পায় তাহলে তারা হিংসা করবে কিভাবে? অতএব উচ্চৈঃস্বরে আমীন বলার সুন্নাত গ্রহণ করাই হবে প্রকৃত মুমিনের দায়িত্ব
(।]. আবুদাঊদ হা/৯৩২, ১/১৩৪-১৩৫ পৃঃ। [2]. তিরমিযী হা/২৪৮, ১/৫৭-৫৮ পৃঃ। [3]. তিরমিযী ১/৫৭-৫৮ পৃঃ। [4]. আবুদাঊদ হা/৯৩৩, ১/১৩৫ পৃঃ, সনদ ছহীহ। [5]. বুখারী হা/৭৮০, ১ম খন্ড, পৃঃ ১০৭, (ইফাবা হা/৭৪৪ ও ৭৪৬, ২/১২১ পৃঃ); মুসলিম হা/৯৪২, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৭৬; আবুদাঊদ হা/৯৩২ ও ৯৩৩, ১/১৩৫ পৃঃ; তিরমিযী হা/২৪৮, ১/৫৭ ও ৫৮ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/৮৫৬। [6]. ছহীহ বুখারী হা/৭৮২, ১ম খন্ড, পৃঃ ১০৭-৮। [7]. আবুদাঊদ হা/৯৭২, ১/১৪০ পৃঃ إذا قرأ: (غير المغضوب عليهم ولا الضالِّين) فَقُوْلُوْا آميْن يُجبْكُم الله। [8]. বুখারী হা/৬৪০২, ২/৯৪৭ পৃঃ। [9]. ছহীহ বুখারী ১ম খন্ড, পৃঃ ১০৭-৮, হা/৭৮০, (ইফাবা হা/৭৪৪ ও ৭৪৬, ২/১২১ পৃঃ)-এর অনুচ্ছেদ। [10]. আহমাদ, ইবনু মাজাহ হা/৮৫৬, সনদ ছহীহ; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৯১। [11]. হেদায়া ১/১০৫ পৃঃ। [12]. ঐ, পৃঃ ২৯৭-৩১২। [13]. তাফসীরে কুরতুবী ১/১২৭ পৃঃ। [14]. ফাতাওয়া উছায়মীন ১৩/৭৮ পৃঃ।
-------------------------------------------------------------------------
More-  http://sgis-ilikeit.blogspot.in/2016/04/blog-post_14.html

Friday 25 December 2015

বিতির সালাত পড়ার সওয়াব কতটুকু? : বিতরের সালাত কত রাকআত?


প্রশ্নঃ বিতির সালাত পড়ার সওয়াব কতটুকু?
======================
উত্তর-বিতির নামায লাল রংয়ের উটের চাইতে বেশি মূল্যবান।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“আল্লাহ একটি নামায দান করে তোমাদেরকে বিশেষ সুযোগ করে দিয়েছেন যা তোমাদের জন্য লাল রংয়ের উটের চাইতে উত্তম। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সেটা কোন নামায? তিনি বললেন, ‘বিতির নামায’ যা পড়া হয় ইশা নামাযের পর থেকে ফযর উদয় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত।”
আবু দাউদঃ ১৪১৮, তিরমিযীঃ ৪৫২, ইবনে মাজাহ, দারেমী, হাদীসটি সহীহ।
“বিতির” শব্দের অর্থ কি?
বিতির শব্দের অর্থ হলো বেজোড়। আর বেজোড় সংখ্যা হলো ১, ৩, ৫, ইত্যাদি। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বিতির সালাত হিসেবে ১ রাকাত, ৩ রাকাত, ৫ রাকাত, ৭ রাকাত, ৯ রাকাত ও ১১ রাকাতও পড়েছেন।
কখন পড়তে হবে?
ইশার পর থেকে ফযরের আগে পর্যন্ত পড়া যাবে। তবে রাতের সর্বশেষ সালাত হিসেবে বিতির পড়তে হবে। বিতির রাতের শেষ অংশে পড়া বেশি সওয়াব, তবে নিয়মিত উঠার অভ্যাস না থাকলে বা শেষ রাত্রে উঠার নিশ্চয়তা না থাকলে ঘুমানোর আগেই পড়ে ফেলতে হবে।
বিতরের সালাতে কি একবার নাকি দু’বার সালাম ফিরাব?
দু’টাই করা জায়েয আছে।
(ক) এক সালামে বিতর পড়ার দলীল :
মিসওয়ার বিন মাখরামা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাতের বেলা আমরা আবূ বাকার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) কে দাফন করলাম। অতপর উমার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, ‘আমি বিতর পড়িনি। এই বলে তিনি দাঁড়ালেন আর আমার তাঁর পেছনে দাঁড়িয়ে গেলাম। এরপর তিনি আমাদের নিয়ে ৩ রাকআত বিতর পড়তেন। শেষ রাকআতের আগে তিনি সালাম ফিরাতেন না (এক সালামে তিন রাকাত বিতর পড়তেন)। (ত্বহাবী : ১৭৪২)
(খ) দু’ সালামে বিতর পড়ার দলীল :
আবদুল্লাহ ইবনে ‘উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু (বিতরে সালাত) প্রথম দুই রাকআত শেষ করে সালাম ফিরাতেন এবং পরে শেষ (তৃতীয়) রাকআতে আবার সালাম ফিরাতেন। প্রথম দুই রাকআতের সালাম ফিরানের পর প্রয়োজনে কোন কাজের নির্দেশও দিতেন। (বুখারী : ৯২১)
আয়েশা সিদ্দিকা (রা) বলেছেন: রাসূল (স) তিন রাকাত বিতরের সালাত আদায় করতেন। দ্বিতীয় রাকাতে বৈঠক করতেন না, শেষ রাকাতে বৈঠক করতেন। (হাকেম:১১৪০)
দ্বিতীয় পদ্ধতি: অন্নান্য সালাতের মত প্রথমে দুই রাকাত পড়ে নিবেন। তাঁরপর পৃথকভাবে এক রাকাত পড়বেন এবং রুকুর আগে বা পরে দুয়া কুনুত পড়ে সিজদা শেষে বসে সালাম ফিরাবেন। (মুসলিম: ১২৫২)
[fm= সহীহ্ ইসলামী জিজ্ঞাসা ভিডিও ]
----------------------------------------------------------------------
প্রশ্ন: বিতরের সালাত কত রাকআত?
উত্তর : বিতরের সালাতের সর্বনিম্ন
সংখ্যা হল এক রাক‘আত এবং সর্বোচ্চ
হল ১১ রাকআত।
বিতরের সালাত ১ রাকআত পড়াও
জায়েয আছে। আল্লাহর নাবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন :কেউ যদি ১ রাকআত বিতর
পড়তে চায়, তা সে করতে পারে। যে
ব্যক্তি বিতরের সালাত ৩ রাকআত
পড়তে চায়, তা সে পড়তে পারে।’’
কেউ ৫ রাকআত বিতর পড়তে চাইলে
তা সে পড়তে পারে।’’ (আবূ দাউদ :
১৪২২; নাসাঈ : ১৭১২)
এভাবে ৭ বা ৯ বা ১১ রাকআত পর্যন্ত
বিতরের সালাত আদায় করার সুযোগ
আছে, জায়েয আছে।
২-প্রশ্ন : বিতরের সালাতে কি
একবার নাকি দু’বার সালাম
ফিরাব?
উত্তর : দু’টাই করা জায়েয আছে।
(ক) এক সালামে বিতর পড়ার দলীল :
মিসওয়ার বিন মাখরামা থেকে
বর্ণিত, তিনি বলেন, রাতের বেলা
আমরা আবূ বাকার (রাদিয়াল্লাহু
আনহু) কে দাফন করলাম। অতপর উমার
(রাদিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, ‘আমি
বিতর পড়িনি। এই বলে তিনি
দাঁড়ালেন আর আমার তাঁর পেছনে
দাঁড়িয়ে গেলাম। এরপর তিনি
আমাদের নিয়ে ৩ রাকআত বিতর
পড়তেন। শেষ রাকআতের আগে তিনি
সালাম ফিরাতেন না (এক সালামে
তিন রাকাত বিতর পড়তেন)।
(ত্বহাবী : ১৭৪২)
(খ) দু’ সালামে বিতর পড়ার দলীল :
আবদুল্লাহ ইবনে ‘উমার
রাদিয়াল্লাহু আনহু (বিতরে সালাত)
প্রথম দুই রাকআত শেষ করে সালাম
ফিরাতেন এবং পরে শেষ (তৃতীয়)
রাকআতে আবার সালাম ফিরাতেন।
প্রথম দুই রাকআতের সালাম
ফিরানের পর প্রয়োজনে কোন
কাজের নির্দেশও দিতেন। (বুখারী
: ৯২১)
আয়েশা সিদ্দিকা (রা) বলেছেন:
রাসূল (স) তিন রাকাত বিতরের
সালাত আদায় করতেন। দ্বিতীয়
রাকাতে বৈঠক করতেন না, শেষ
রাকাতে বৈঠক করতেন।
(হাকেম:১১৪০)
দ্বিতীয় পদ্ধতি: অন্নান্য সালাতের
মত প্রথমে দুই রাকাত পড়ে নিবেন।
তাঁরপর পৃথকভাবে এক রাকাত পড়বেন
এবং রুকুর আগে বা পরে দুয়া কুনুত পড়ে
সিজদা শেষে বসে সালাম
ফিরাবেন। (মুসলিম: ১২৫২)
৩-প্রশ্ন: বিতরের সালাত কি
মাগরিবের ৩ রাকাতের নিয়মে
পড়তে হবে?
উত্তর :না । এরূপ করার কোন সহি
হাদিস নেই।
ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, রাসুল
(সাঃ) বলেছেন, রাতের বিতর তিন
রাকাত উহা দিনের বিতর
মাগরিবের মত।
এই হাদিস যইফ-দারাকুত্নী
হাদিসটি বর্ননা করেন এবং যইফ
সাব্যস্ত করেন।
ইবনু ওমর (রাঃ) এর বরাতে,'মাগরিব
হচ্ছে দিনের বিতর। তোমরা
রাতের নামাজকে বিতর
কর।'তাবারানী উক্ত হাদিস বর্ননা
করেন।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত,
রাসুল (সাঃ) বলেন,
'তোমরা মাগরিবের সালাতের
সাথে সাদৃশ্য করে তিন রাকাত
বিতর পড় না, বরং পাঁচ রাকাত
দ্বারা, সাত রাকাত দ্বারা বা নয়
রাকাত দ্বারা কিংবা এগার
রাকাত দ্বারা বিতর
পড়।'দারাকুত্নী উক্ত হাদিস বর্ননা
করেন, হাদিস সহিহ।

------------------------------------------------------------------
 

বইঃ সূনান আত তিরমিজী [তাহকীককৃত], অধ্যায়ঃ ৩/ কিতাবুল বিতর (বিতর নামায), হাদিস নম্বরঃ ৪৫৯

৬ ॥ বিতর নামায পাঁচ রাক‘আত
৪৫৯ । আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাতের নামাযের সংখ্যা ছিল তের রাকাআত। এর মধ্যে পাঁচ রাকাআত তিনি বিতর আদায় করতেন। এ পাঁচ রাক'আত আদায় শেষ করেই তিনি বসতেন। মুয়াযযিন আযান দিলে তিনি উঠে হালকা দুই রাকাআত নামায আদায় করতেন। সহীহ। সহীহ আবু দাউদ- (১২০৯, ১২১০), সালাতুত তারাবীহ, মুসলিম।
এ অনুচ্ছেদে আবু আইউব (রাঃ) হতেও হাদীস বর্ণিত আছে। আবু ঈসা বলেনঃ আয়িশাহ'র হাদীসটি হাসান সহীহ । নাবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের কিছু বিশেষজ্ঞ সাহাবা ও অন্যরা বিতর নামায পাঁচ রাকাআত হওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। তারা বলেছেন, এর কোন রাকাআতেই বসবে না, সর্বশেষ রাকাআতে বসবে।
আবু ঈসা বলেনঃ “নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নয় বা সাত রাকাআত বিতর পড়তেন” এই হাদীস সম্পর্কে আমি মুসআব আল-মাদীনীকে জিজ্ঞেস করলাম। আমি বললাম, তিনি কিভাবে নয় বা পড়ার পর সালাম ফিরাতেন এবং শেষে এক রাকাআত বিতর পড়তেন।
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)

Friday 18 December 2015

বিতিৰৰ কুনূত -sahih

Juber Rahman বিত্‌ৰ নামাজৰ মুস্তাহাব ক্বিৰাআত-- এই নামাজত ছুৰা ফাতিহাৰ পিছত যিকোনো ছুৰা পঢ়িব পাৰি। তথাপি মুস্তাহাব হ'ল, প্রথম ৰাকআতত ছুৰা আ’লা, দ্বিতীয় ৰাকআতত ছুৰা কাফিৰুন আৰু তৃতীয় ৰাকআতত ছুৰা ইখলাছ পঢ়া। (আহমাদ, মুচনাদ, নাচাঈ,চুুনান, দাৰেমী, চুনান,হাকেম, মুস্তাদৰাক, মিশকাত ১২৭০-১২৭২নং) মহানবী (ছাঃ)এ মাজে-সময়ে তৃতীয় ৰাকআতত ছুৰা ইখলাছৰ সৈতে ছুৰা নাছ আৰু ফালাকও পাঠ কৰিছিল। (আবূদাঊদ, চুনান, তিৰমিজী, চুনান,হাকেম, মুস্তাদৰাক ১/৩০৫) বিতিৰৰ কুনূত : মহানবী (ছাঃ)এ হজৰত হাছান বিন আলী (ৰাঃ)-ক তলৰ দুআটো বিত্‌ৰ নামাজত ক্বিৰাআত শেষ কৰাৰ পিছত (ৰুকূৰ আগত) পঢ়িবলৈ শিকাইছিল:- اَللّهُمَّ اهْدِنِيْ فِيْمَنْ هَدَيْتَ وَعَافِنِيْ فِيْمَنْ عَافَيْتَ وَتَوَلَّنِيْ فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ وَبَارِكْ لِيْ فِيْمَا أَعْطَيْتَ وَقِنِيْ شَرَّ مَا قَضَيْتَ فَإِنَّكَ تَقْضِيْ وَلاَ يُقْضى عَلَيْكَ إِنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَّالَيْتَ وَلاَ يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ لاَ مَنْجَا مِنْكَ إِلاَّ إِلَيْكَ (وَصَلَّى اللهُ عَلى نَبِيِّنَا مُحَمَّدٍ)। উচ্চাৰণ:- আল্লা-হুম্মাহ্‌দিনী ফী মানহাদাইত। অআ-ফিনী ফীমান আ ফাইত। অতাওৱাল্লানী ফী মান তাওৱাল্লাইত। অবা-ৰিকলী ফী মা আ’ত্বাইত। অকি¸নী শাৰ্ৰমা ক্বাযাইত। ফাইন্নাকা তাক্বয্বি অলা ইউক্বয্বা আলাইক। ইন্নাহু লা য়্যাযিল্লু মাঁ উওয়া-লাইত। অলা য়্যাইযযু মান আ’-দাইত। তাবা-ৰাকতা ৰাব্বানা অতাআ’-লাইত। লা মানজা মিনকা ইল্লা ইলাইক। (অ স্বাল্লাল্লাহু আলা নাবিয়িনা মুহাম্মাদ।) অর্থ - হে আল্লাহ! তুমি আমাক হিদায়াত কৰা; তেওঁলোকৰ দলভুক্ত কৰা যিসকলক তুমি হিদায়াত কৰিছা। আমাক নিৰাপদে ৰাখি তেওঁলোকৰ দলভুক্ত কৰা যিসকলক তুমি নিৰাপদে ৰাখিছা, আমাৰ সকলো কামৰ তত্তাৱধান কৰি আমাক তেওঁলোকৰ দলভুক্ত কৰা যাক তুমি তত্তাৱধান কৰিছা। তুমি আমাক যি দান কৰিছা তাতে বৰকত দিয়া। আমাৰ ভাগ্যত তুমি যি ফায়চালা কৰিছা তাৰ বেয়াৰ পৰা ৰক্ষা কৰা। কাৰণ তুমিই ফায়চালা কৰি থাকা আৰু তোমাৰ ওপৰত কাৰো ফায়চালা নচলে। নিশ্চয় তুমি যাক ভালোপোৱা সি লাঞ্জিত নহয় আৰু যাক বেয়া পোৱা সি সন্মানীত নহয়। তুমি বৰকতময় হে আমাৰ প্রভু আৰু তুমি সুমহান। তোমাৰ আযাবৰ পৰা তোমাৰ বাহিৰে কোনো আশ্রয়স্থল নাই। আৰু আমাৰ নবীৰ ওপৰত আল্লাহ ৰহ্‌মত বর্ষণ কৰা। (আবূদাঊদ, চুনান, তিৰমিজী, চুনান, নাসচঈ, চুনান, আহমাদ, মুছনাদ, বায়হাকী, ইবনে মাজাহ্‌, চুনান, মিশকাত ১২৭৩নং, ইর: ২/১৭২) প্রকাশ থাকে যে, দুআৰ শেষত দৰূদৰ উল্লেখ উক্ত হাদীছ সমূহত নাথাকিলেও চালাফাসকলে আমলৰ শেষত দৰূদ পঢ়াৰ কথা সমর্থন কৰে। আৰু সেই কাৰণেই দুআৰ শেষত ইয়াত দৰূদ যুক্ত কৰা হৈছে। (তামামুল মিন্নাহ্‌, আলবানী ২৪৩পৃ:, চিফাতু স্বালাতিন নাবী (ছাঃ), আলবানী)
-----------------------------------------------------------------------------------------------

আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ
_____________/////////______________

বিতরের সঠিক দুয়া কুনুতটি শিখে নিন।

বিতর সালাতে দুআ কুনুতঃ

اَللَّهُمَّ اهْدِنِيْ فِيْمَنْ هَدَيْتَ، وَعَافِنِىْ فِيْمَنْ عَافَيْتَ، وَتَوَلَّنِيْ فِيْمَنْ تَوَلَّيْتَ، وَبَارِكْ لِيْ فِيْمَا أَعْطَيْتَ، وَقِنِيْ شَرَّ مَا قَضَيْتَ، فَإِنَّكَ تَقْضِىْ وَلاَ يُقْضَى عَلَيْكَ، إنَّهُ لاَ يَذِلُّ مَنْ وَّالَيْتَ، وَ لاَ يَعِزُّ مَنْ عَادَيْتَ، تَبَارَكْتَ رَبَّنَا وَتَعَالَيْتَ، وَصَلَّى اللهُ عَلَى النَّبِىِّ-

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাহ্দিনী ফীমান হাদায়িত , ওয়া ‘আ-ফিনী ফীমান ‘আ-ফাইত, ওয়া তাওয়াল্লানী ফীমান তাওয়াল্লাইত, ওয়া বা-রিকলি ফীমা ‘আ‘ত্বাইত, ওয়া ক্বিনী শাররা মা ক্বাযাইত; ফাইন্নাকা তাক্বযী ওয়া লা ইয়ুক্বযা ‘আলাইক, ইন্নাহূ লা ইয়াযিল্লু মাঁও ওয়া-লাইত, ওয়া লা ইয়া‘ইয্ঝু মান্ ‘আ-দাইত, তাবা-রকতা রববানা ওয়া তা‘আ-লাইত, ওয়া সাল্লাল্লা-হু ‘আলান্ নাবী’।

অনুবাদ : হে আল্লাহ! তুমি যাদেরকে সুপথ দেখিয়েছ, আমাকে তাদের মধ্যে গণ্য করে সুপথ দেখাও। যাদেরকে তুমি মাফ করেছ, আমাকে তাদের মধ্যে গণ্য করে মাফ করে দাও। তুমি যাদের অভিভাবক হয়েছ, তাদের মধ্যে গণ্য করে আমার অভিভাবক হয়ে যাও। তুমি আমাকে যা দান করেছ, তাতে বরকত দাও। তুমি যে ফায়ছালা করে রেখেছ, তার অনিষ্ট হ’তে আমাকে বাঁচাও। কেননা তুমি সিদ্ধান্ত দিয়ে থাক, তোমার বিরুদ্ধে কেউ সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। তুমি যার সাথে বন্ধুত্ব রাখ, সে কোনদিন অপমানিত হয় না। আর তুমি যার সাথে দুশমনী কর, সে কোনদিন সম্মানিত হ’তে পারে না। হে আমাদের প্রতিপালক! তুমি বরকতময় ও সর্বোচ্চ। আল্লাহ তাঁর নবীর উপরে রহমত বর্ষণ করুন’।

সুনানু আরবা‘আহ, দারেমী, মিশকাত হা/১২৭৩ ‘বিতর’ অনুচ্ছেদ-৩৫; ইরওয়া হা/৪২৯, ২/১৭২।
---------
Firoz Sjr
 

Thursday 10 December 2015

এশার সলাত যত দেরিতে পড়া যাবে তত উত্তম তবে মাজরাতের আগে হতে হবে


আসসালামু আলায়কুমুস সালাম।
আমি যেখানে থাকি সেখানে প্রকৃত এশার ওয়াক্ত সময় ৮:১৪। আমি অফিস হতে রুমে আসি ৮:৩০/৯:০০ (প্রায়শ:)। আর আমার হাউজের নীচে আযান দেয় রাত ৯:২০ আর জামাত করে ৯:৩০।
তো কথা হল, আমি কি আওয়াল ওয়াক্তে অর্থাৎ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একাই সলাত আদায় করে নেব, নাকি জামাতে পড়ার জন্য অপেক্ষা করব? আরও সমস্যা হল ঈমাম সাহেব কড়া বিদা'তী!!!!
উত্তরের উপেক্ষায় রইলাম ভাইজান!!!!
[Ohidul Islam to আপনার জিজ্ঞাসা--> জেনে নিন--> দ্বীনি প্রশ্নোত্তর]
Nayon Ahmed ওয়া আলাইকুমুস সালাম, এশার সলাত যত দেরিতে পড়া যাবে তত উত্তম তবে মাজরাতের আগে হতে হবে, রাসুল (সাঃ) একবার এতো দেরি করে এশার সলাত আদায় করেছেন যে, মসজিদে এসে কিছু সাহাবারা ঝিমিয়ে গিয়েছিল তারপর রাসুল (সাঃ) বললেন, লোকের কষ্ট না হলে এই সময়েই এশার সলাত আদায়ের নির্দেশ দিতাম তাই এশার জামাত দেরিতে করা উত্তম যদি মানুষের কষ্ট না হয় তাই ৯ঃ৩০ এই জামাতে সামিল হবেন প্রতিদিন ইন শা আল্লাহ।

Monday 7 December 2015

Rafee-Yadin in Salat-Arfan Ali shared with misconpeption

শায়খ ‘আবদুল ক্বাদিৰ জিলানী (ৰহঃ) চালাতৰ ছূন্নাত সমূহৰ বর্ণনা কৰিবলৈ গৈ কৈছে যে চালাত আৰম্ভ কৰাৰ সময়ত, ৰুকুলৈ যোৱাৰ সময়ত আৰু ৰুকুৰ পৰা উঠাৰ সময়ত ৰফ’উল ইয়াদাইন কৰা (বা দুই হাত কান বা কান্ধলৈকে উত্তোলন কৰা) ছূন্নাত। (গুনিয়াতুত ত্বালিবীন, পৃ-১০)।
=> হানাফী ‪#‎মাযহাবের‬ অনুসারীগণ নামাজে রুকুতে যাওয়ার সময় এবং রুকু থেকে ওঠার সময় ‪#‎রফউল_ইয়াদাইন‬ করেনা।
হানাফী আলিম সমাজ আমাদের মত অধম বান্দাদের বলে থাকেন, এটি নাবী মুহাম্মাদ (সাঃ) প্রথম দিকে করেছেন এবং শেষের দিকে বাদ দিয়েছেন অর্থাৎ মানসুখ হয়ে গেছে। আমরা সেই বিশ্বাসেই আজ রফ’উল ইয়াদাইন করি না। যাহা অন্যান্য মাযহাব এবং আমাদের দেশে আহলে হাদীস বা সালাফীগণ করে থাকেন। মসজিদের হুজুরকে জিজ্ঞেসা করলে বলে, দু’ইটাই সুন্নাত। আসুন একটু বিস্তারিত আলোচনা করিঃ
=> প্রথমেই আমাদের ‪#‎হানাফী‬ মাযহাবের শ্রেষ্ঠ ‪#‎আলিমগণের‬ মতামত দিয়ে শুরু করা যাকঃ
১. মোল্লা ‘আলী ক্বারী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ সালাতে রুকু’তে যাওয়ার সময় ও রুকু’ থেকে উঠার সময় দু’ হাত না তোলা সম্পর্কে যেসব হাদীস বর্ণিত হয়েছে সেগুলো সবই বাতিল হাদীস। তন্মধ্যে একটিও সহীহ নয়। (মাওযু’আতে কাবীর, পৃ-১১০)
২. হানাফী মুহাদ্দিস আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী (রহঃ) রুকু’তে যাওয়ার পূর্বে রফ’উল ইয়াদাইন করার ব্যাপারে ইমাম আবূ হানিফা (রহঃ) সম্পর্কে লিখেছেনঃ ইমাম আবূ হানিফা সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তা ত্যাগ করলে গুনাহ হবে। (’উমদাতুল ক্বারী, ৫/২৭২)
৩. শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলবী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ যে মুসল্লী রফ’উল ইয়াদাইন করে ঐ মুসল্লী আমার কাছে অধিক প্রিয় সেই মুসল্লীর চাইতে যে রফ’উল ইয়াদাইন করে না। কারন রফ’উল ইয়াদাইন করার হাদীসগুলো সংখ্যায় বেশি এবং অধিকতর মজবুত। (হুজ্জাতুল্লাহহিল বালিগাহ ২/১০)
তিনি আরো বলেন, রফ’উল ইয়াদাইন হচ্ছে সম্মান সূচক কর্ম। যা মুসল্লীকে আল্লাহর দিকে রুজু হওয়ার ব্যাপারে এবং সালাতে তন্ময় হওয়ার ব্যাপারে হুশিঁয়ার করে দেয়। (হুজ্জাতু্ল্লাহিল বালিগাহ ২/১০)
৪. আল্লামা আবুল হাসান সিন্ধী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ যারা এ কথা বলে যে, তাকবীরে তাহরীমাহ ছাড়া রুকু’তে যাওয়ার সময় এবং রুকু’ থেকে উঠার সময় দু’ হাত তোলার হাদীস মানসূখ ও রহিত, তাদের ঐ দাবী দলীলবিহীন এবং ভিত্তিহীন। (শারহু সুনানে ইবনে মাজাহ, মিসরের ছাপা ১ম খন্ড ১৪৬ পৃষ্ঠার টিকা)
৫. আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশমিরী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ এ কথা জানা উচিত যে, সালাতে রফ’উল ইয়াদাইন করার হাদীস সূত্র ও ‘আমালের দিক দিয়ে ****মুতাওয়াতির,এতে কোনই সন্দেহ নেই। আর এটা মানসূখও নয় এবং এর একটি হরফও নাকচ নয়। (নাইলুল ফারকাদাইন, পৃ- ২২, রসূলে আকরাম কী নামায, পৃ-৬৯)
****মুতাওয়াতিরঃমুতাওয়াতির বলা হয় সেই হাদীসকে যেটিকে এতো অধিক সংখ্যক বর্ণনাকারী বর্ণনা করেছেন যে, তাদের পক্ষে সাধারণত মিথ্যার উপর একত্রিত হওয়া সম্ভব নয়।
৬. আল্লামা ‘আবদুল হাই লাখনৌভী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ নাবী (সাঃ)-এর সূত্রে রফ’উল ইয়াদাইন করার প্রমাণ বেশী এবং প্রাধান্যযোগ্য।আর এটা মানসূখ বা নাকচ হবার দাবী যা ত্বাহাভী, ইবনুল হুমাম ও আইনী প্রমূখ আমাদের দলের মনীষীদের পক্ষ থেকে প্রচারিত হয়েছে, তা এমনই প্রমাণহীন যে তদদ্বারা রোগী নিরোগ হয় না এবং পিপাসার্তও তৃপ্ত হয় না। (আত-তা’লীকুল মুমাজ্জাদ, পৃ-৯১)
৭. ইমাম মুহাম্মাদের সাথী ও ইমাম আবূ ইউসূফের শিষ্য ইসাম ইবনু ইউসূফ আল বালাখী (রহঃ)-এর রফ’উল ইয়াদাইন করা সম্পর্কে আল্লামা ‘আবদুল হাই লাখনৌভী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ ইসাম ইবনু ইউসূফ ছিলেন ইমাম আবূ ইউসূফের শাগরিদ এবং হানাফী। তিনি রুকু’তে যাওয়ার সময় এবং রুকু’ থেকে উঠার সময় রাফ’উল ইয়াদাইন করতেন- (আল-ফাওয়ায়িদুল বাহিয়্যাহ ফী তারাজিমিল হানাফিয়্যাহ, পৃ-১১৬)। আবদুল্লাহ ইবনু মুবারক, সুফিয়ান সাওরী এবং শু’বাহ (রহঃ) বলেন, ইসাম ইবনু ইউসূফ মুহাদ্দিস ছিলেন। সেজন্য তিনি রফ’উল ইয়াদাইন করতেন। (আল-ফাওয়ায়িদুল বাহিয়্যাহ, পৃ-১১৬)
৮. শায়খ আবূত ত্বালিব মাক্কী হানাফী (রহঃ) তার ‘কুতুল কুলূব’ গ্রন্থে সালাতের সুন্নাত সমূহ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, রুকু’তে যাওয়ার সময় রফ’উল ইয়াদাইন করা ও তাকবীর বলা সুন্নাত। তারপর ‘সামিআল্লাহুলিমান হামিদাহ’ বলে রফ’উল ইয়াদাইন করা সুন্নাত। (কুতুল কুলূব ৩/১৩৯)
৯. কাজী সানাউল্লাহ পানিপত্তি হানাফী (রহঃ) বলেনঃ বর্তমান সময়ের অধিকাংশ ‘আলিমের দৃষ্টিতে রফ’উল ইয়াদাইন করা সুন্নাত। অধিকাংশ ফাক্বীহ ও মুহাদ্দিসীনে কিরাম একে প্রমাণ করেছেন। (মালাবুদ্দাহ মিনহু, পৃ-৪২, ৪৪)
১০. শায়খ ‘আবদুল ক্বাদির জিলানী (রহঃ) সালাতের সুন্নাত সমূহের বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ সালাত শুরু করার সময়, রুকু’তে যাওয়ার সময় এবং রুকু’ হতে উঠার সময় রফ’উল ইয়াদাইন করা সুন্নাত। (গুনিয়াতুত ত্বালিবীন, পৃ-১০)
১১. দ্বিতীয় আবূ হানিফা নামে খ্যাত আল্লামা ইবন নুজাইম (রহঃ) বলেনঃ রুকু’তে যাওয়ার সময় ও রুকু’ থেকে মাথা উঠানোর সময় রফ’উল ইয়াদাইন করলে সালাত বরবাদ হবার কথা যা মাকহুল নাসাফী ইমাম আবূ হানিফা থেকে বর্ণনা করেছেন তা বিরল বর্ণনা, যা রিওয়ায়াত ও দিরায়াত উভয়েরই পরিপন্থী অর্থাৎ সূত্রতঃ ও জ্ঞানত” ঠিক নয়। (রাহরু রায়িক ১/৩১৫, যাহরাতু রিয়অযুল আবরার, পৃ-৮৯)
১২. দেওবন্দের শায়খুল হিন্দ মাওলানা মাহমূদুল হাসান বলেনঃ রফ’উল ইয়াদাইন মানসূখ নয়। আর এর স্থায়িত্ব প্রমাণিত নয়- (ইযাহুল আদিল্লাহ)। ইতিপূর্বে ইমাম যায়লায়ী হানাফীর বরাত দিয়ে প্রমাণ করা হয়েছে যে, এর স্থায়িত্ব প্রমাণিত। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মৃত্যু পর্যন্ত আজীবন রাফ’উল ইয়াদাইন করেছিলেন। (নাসবুর রায়াহ তাখরীজ আহাদীসিল হিদায়া ১/৪১০)
১৩. মুফতী আমিমুল ইহসান লিখেছেনঃ যারা রফ’উল ইয়াদাইন করার হাদীস মানসূখ-আমি বলি, তাদের একটি মাত্র দলীল (অর্থাঃ ইবনু মাস’উদের হাদীস), দ্বিতীয় কোন দলীল নাই। (ফিকহুস সুনার ওয়াল আসার, পৃ-৫৫)
১৪. হানাফী মাযহাবের ফিক্বাহ গ্রন্থাবলীতেও রাফ’উল ইয়াদাইনের পক্ষে বক্তব্য রয়েছে। তন্মধ্যকার কয়েকটি উল্লেখ করা হলঃ
(ক) রুকু’র পূর্বে ও পরে রফ’উল ইয়াদাইন করার হাদীস প্রমাণিত আছে। (আয়নুল হিদায়া ১/৩৮৪, নুরুল হিদায়া)
(খ) রফ’উল ইয়াদাইন করার হাদীস, রফ’উল ইয়াদাইন না করার হাদীসের চাইতে শক্তিশালী ও মজবুত। (আয়নুল হিদায়া ১/৩৮৯)
(গ) বায়হাক্বীর হাদীসে আছে, ইবনু উমার বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মৃত্যু পর্যন্ত সালাতের মধ্যে রফ’উল ইয়াদাইন করেছেন। (ইয়নুল হিদায়া ১/১৮৬)
(ঘ) রফ’উল ইয়াদাইন না করার হাদীস দুর্বল। (নুরুল হিদায়া, ১০২)
(ঙ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে রফ’উল ইয়াদাইন প্রমাণিত আছে এবং এটাই হাক্ব। (আয়নুল হিদায়অ ১/৩৮৬)
=> এবার সহীহ হাদীসের আলোকে রফ’উল ইয়াদাইনের কয়েকটি প্রসিদ্ধ হাদীস বর্ণনা করা হলোঃ
(১) ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে দেখেছি, তিনি যখন সালাতেস জন্য দাঁড়াতেন তখন কাঁধ পর্য্ত দু’ হাত উঠাতেন, এবং তিনি যখন রুকু’র জন্য তাকবীর বলতেন তখনও এরূপ করতেন, আবার যখন রুকু’ থেকে মাথা উঠাতেন তখনও এ রকম করতেন এবং সামিআল্লাহুলিমান হামিদাহ বলতেন। তবে তিনি সাজদাহর সময় এমন করতেন না। (সহীহুল বুখারী, ৭৩৪, ৭৩৫, মুসলিম, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ, আহমাদ, মুয়াত্তা মালিক, মায়াত্তা মুহাম্মাদ, ত্বাহাভী, বায়হাক্বী, তিরিমিযী)
(২) মালিক ইবনুল হুওয়াইরিস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন সালাতের জন্য তাকবীর দিতেন তখন কান পর্যন্ত দু’ হাত উঠাতেন। একইভাবে তিনি রুকু’তে যাওয়ার সময় কান পর্যন্ত দু’ হাত উঠাতেন এবং রুকু’ থেকে উঠার সময়ও কান পর্যন্ত হাত উঠাতেন ও সামিআল্লাহুলিমান হামিদাহ বলতেন। (সহীহ মুসলিম হা/৩৯১, সহীহ সুনানে ইবনে মাজাহ, সহীহ আবূ দাউদ, ইরওয়অ ২/৬৭, হাদীসটি সহীহ)
(৩) আলী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে তাকবীরে তাহরীমাহর সময়, রুকু’র সময়, রুকু’ হতে মাথা উঠানোর সময় এবং দু’ রাক’আত শেষে তৃতীয় রাক’আতে দাঁড়ানোর সময়ে রফ’উল ইয়াদাইন করতে দেখেছেন। (বায়হাক্বী ২/৮০, বুখারীর জুযউল ক্বিরআত, আবূ দাউদ, ইবনে মাজাহ)
(৪) ওয়ায়িল ইবনু হুজর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সাথে সালাত আদায় করেছি। তিনি তাকবীর দিয়ে সালাত আরম্ভ করে দু’হাত উঁচু করলেন। অতঃপর রুকু’ করার সময় এবং রুকু’র পরেও দু’হাত উঁচু করলেন। (আহমাদ, বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, ইবনে মাজাহ, আবূ দাউদ)
(৫) মুহাম্মাদ ইবনু ‘আমর বলেন, আমি নাবী (সাঃ) এর দশজন সাহাবীর মধ্যে আবূ হুমাইদের নিকট উপস্থিত ছিলাম, তাঁদের (আবূ হুমাইদ, আবূ উসাইদ, সাহল ইবনু সা’দ, মুহাম্মাদ ইবনু মাসলামাহ- (রাঃ) প্রমুখ সাহাবীগণের) মধ্যে একজন আবূ ক্বাতাদাহ ইবনু রবয়ী (রাঃ) ও ছিলেন। তিনি বললেন, আমি রসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সালাত সম্পর্কে আপনাদের চাইতে বেশি অবগত। তাঁরা বললেন, তা কিভাবে? আল্লাহর শপথ! আপনি তো আমাদের চেয়ে তাঁর অধিক নিকটবর্তী ও অধিক অনুসরণকারী ছিণেন না। তিনি বললেন, বরং আমি তো তাঁকে পর্যবেক্ষন করেছিলাম। তাঁরা বললেন, এবার তাহলে উল্লেখ করুন। তিনি বললেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) যখন সালাতে দাঁড়াতেন তখন দু’হাত উঁচু করতেন এবং যখন রুকু’ করতেন, রুকু’ থেকে মাথা উঠাতেন, এবং দু’ রাক’আত শেষে তৃতীয় রাক’আতে দাঁড়াতেন তখনও দু’ হাত উঁচু করতেন। এ বর্ণনা শুনে তাঁরা সবাই বললেন, আপনি সত্যই বলেছেন। (বুখারীর জুযউল ক্বিরাআত, সহীহ ইবনু মাজাহ, সহীহ আবূ দাউদ)
=> রফ’উল ইয়াদাইন সম্পর্কে বর্ণিত হাদীস ও আসারের সংখ্যা এবং সেসবের মান-
(ক) রফ’উল ইয়াদাইন সম্পর্কে বর্ণিত সর্বমোট সহীহ হাদীস ও আসারের সংখ্যা অনূ্যন ৪০০ শত। (সিফরুস সাআদাত, পৃ-১৫)
(খ) ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, রফ’উল ইয়াদাইনের হাদীস সমূহের সানাদের চেয়ে বিশুদ্ধতম সানাদ আর নেই। (ফাতহুল বারী ২/২৫৭)
(গ) হাদীসের অন্যতম ইমাম হাফিয তাকীউদ্দিন সুবকী (রহঃ) বলেন, সালাতের মধ্যে রফ’উল ইয়অদাইন করার হাদীস এতো বেশী যে, রফ’উল ইয়াদাইনের হাদীসকে মুতাওয়াতির বলা ছাড়া উপায় নেই। (সুবকীর জুযউ রফ’উল ইয়াদাইন)
রফ’উল ইয়াদাইনের হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবীগণের সংখ্যা-
*** রুকু’তে যাওয়া ও রুকু’ হতে উঠার সময় রফ’উল ইয়অদাইন করা সম্পর্কে চার খলীফাসহ প্রায় ২৫ জন সাহাবী থেকে বর্ণিত হাদীস সমূহ রয়েছে। (সালাতুর রসূল (সাঃ), পৃষ্ঠা ৬৫, হাদীস ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত)
***মুহাদ্দিস ইরাক্বী (রহঃ) তাঁর ফাতহুল মুগীস গ্রন্থে বলেন, আমি সালাতে রফ’উল ইয়াদাইনের হাদীস প্রায় ৫০ জন সাহাবা হতে একত্রিত করেছি। তিনি তাকরীবুল আসানীদ ও তাকরীবুল মাসানীদ গ্রন্থে বলেন, জেনে রাখ! সালাতে রফ’উল ইয়াদাইনের হাদীস ৫০ জন সাহাবায়ি কিরাম হতে বর্ণিত হয়েছে। (ফাতহুল মুগীস ৪/৮, কিতাবু তাকরীবুল আসানীদ ও তাকরীবুল মাসানীদ প্র-১৮)
=> রাফ’উল ইয়াদাইনের গুরুত্ব ও ফাযীলাত-
(১) মালিক বলেন, ইবনু ‘উমার (রাঃ) কোন ব্যক্তিকে সালাতে রুকু’র সময় ও রুকু’ থেকে উঠার সময় রফ’উল ইয়াদাইন না করতে দেখলে তাকে ছোট পাথর ছুঁড়ে মারতেন, যতক্ষন না সে রফ’উল ইয়াদাইন করে। (বুখারীর জুযউ রফ’উল ইয়াদইন, আহমাদ, দারকুতনী-নাফি, হতে সহীহ সানাদে)
(২) ‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি রুকু’র সময় এবং রুকু’ থেকে মাথা উঠানোর সময় রফ’উল ইয়াদাইন করে তার জন্য রয়েছে প্রত্যেক ইশারার বিনিময়ে দশটি নেকী। (বায়হাক্বীর মা’রিফাত ১/২২৫, মাসায়িলে আহমাদ, কানযুল ‘উম্মাল)
(৩) ইবনু ‘উমার (রাঃ) বলেন, রফ’উল ইয়াদাইন হচ্ছে সালাতের সৌন্দর্য্যের একটি শোভা। প্রত্যেক রফ’উল ইয়াদাইনের বদলে দশটি করে নেকী রয়েছে, অর্থাৎ প্রত্যেক আঙ্গুলের বিনিময়ে রয়েছে একটি করে নেকী। (আল্লামা আইনী হানাফীর ‘উমদাতুল ক্বারী ৫/২৭২)
এতে প্রমাণিত হয়, রফ’উল ইয়াদাইন করার কারণে দু’ রাক’আত সালাতে ৫০ আর চার রাক’আত সালাতে ১০০টি নেকী বেশি পাওয়া যায়। এ হিসেবে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্তের ১৭ রাক’আত ফরয সালাতে ৪৩০ নেকী, একমাসে ১২,৯০০ নেকী আর এক বছরে ১,৫৪,৮০০ নেকী শুধু রফ’উল ইয়াদাইন করার জন্য বাড়তি যোগ হচ্ছে। সুতরাং কোন ব্যক্তি সালাতে রফ’উল ইয়াদাইন করার কারণে ৩০ বছরে ৪৬,৪৪,০০০ নেকী আর ৬৫ বছরে ১,০০,৬২,০০০ নেকী বেশি পাচ্ছেন। এটা শুধু পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সালাতের হিসাব এছাড়া সুন্নাত, নাফল, বিতর, তাহাজ্জুত, তারাবীহ প্রভৃতি সালাতে রফ’উল ইয়াদাইন করার নেকী তো রয়েছেই। যা এ হিসাব অনুপাতেই পাওয়া যাবে। সুতরাং যারা ফারয, সুন্নাত, নাফল প্রভৃতি সালাতে রফ’উল ইয়াদাইন করেন না তারা কতগুলো নেকী থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তা কি ভেবে দেখেছেন? অথচ ক্বিয়ামাতের দিন হাশরের ময়দানে মানুষ একটি নেকী কম হওয়ার কারনে জান্নাতে যেতে পারবে না!
=> আমাদের মাযহাবের রফ’ইয়াদাইন না করার পক্ষে সবথেকে শক্তিশালী হাদীস এবং তার তাত্বিক পর্যালোচনাঃ
****”আলক্বামাহ (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমি কি তোমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর সালাত কিরূপ ছিল তা শিক্ষা দেব না? বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তিনি সালাত আদায় করলেন এবং তাতে কেবল একবার হাত উত্তোলন করলেন। (আবূ দাউদ, তিরমিযী, নাসয়ী)
হাদীসটি ইমাম তিরমিযী হাসান বলেছেন এবং ইবনু হাযাম বলেছেন সহীহ। পক্ষান্তরে অন্যান্য ইমামগণ এটিকে দুর্বল আখ্যায়িত করেছেন। যেমন ইমাম বুখারী, ইমাম আহমাদ উবনু হাম্বাল, ইমাম নাববী, ইমাম শাওকানী (রহঃ) প্রমূখ ইমামগণ হাদীসটিকে দুর্বল বলেছেন। (আল-মাজমু’আহ ফী আহাদীসিল মাওযু’আহ, ২০ পৃঃ)
ইমাম ইবনু হিব্বান বলেন, রফ’উল ইয়াদাইন না করার পক্ষে কূফাবাসীদের এটিই সবচেয়ে বড় দলীল হলেও এটিই সবচেয়ে দুর্বলতম দলীল। কেননা এর মধ্যে এমন সব বিষয় রয়েছে যা একে বাতিল বলে গণ্য করে। (নায়লুল আওত্বার ৩/১৪, ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১০৪, আওনুল মা’বুদ)
হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ) ‘আত-তালখীস’ গ্রন্থে বলেন, ইবনুল মুবারক বলেছেন, হাদীসটি আমার নিকট প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত নয়। ইবনু আবূ হাতিম বলেন, এ হাদীসটি ভুল ও ত্রুটিযুক্ত। ইমাম আহমাদ ও তাঁর শায়খ ইয়াহইয়া ইবনু আদাম বলেন, হাদীসটি দুর্বল। ইমাম আবূ দাউদ বলেন, হাদীসটি সহীহ নয়। ইমাম দারকুতনী বলেন, হাদীসটি প্রমাণিত নয়। ইমাম বায়হাক্বী এবং ইমাম দারিমী (রহঃ) ও হাদীসটিকে দুর্বল বলে আখ্যায়িত করেছেন। অন্যদিকে ইমাম তিরমিযী হাসান বললেও তিনি নিজেই আবার ‘আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক (রহঃ) -এর সূত্রে উল্লেখ করেছেন যে, হাদীসটি প্রমাণিত নয় এবং প্রতিষ্ঠিতও নয়। (আওনুল মা’বুদ, নায়লুল আওত্বার, জামি আত-তিরমিযী ও অন্যান্য)
আল্লামা শামসুল হাক্ব ‘আযীমাবদী (রহঃ) বলেন, তাকবীরে তাহরীমাহ ব্যতীত অন্যত্র রফ’উল ইয়াদাইন না করার পক্ষে এ হাদীসটি দলীল হিসাবে পেশ করা হয়। কিন্তু হাদীসটি দলীলযোগ্য নয়। কেননা হাদীসটি দুর্বল ও অপ্রমাণিত।
আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেন, নাবী (সাঃ) হতে ইবনু মাসউদের সূত্র ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে রফ’উল ইয়অদাইন ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে সহীহ সুন্নাহ সাব্যস্ত হয়নি। আর ইবনু মাসউদের এ হাদীসটিকে সহীহ মেনে নিলেও তা রফ’উল ইয়াদাইন এর পক্ষে বর্ণিত সহীহ হাদীসসমূহের বিপরীতে পেশ করা যাবে না এবং ইবনু মাসউদের এ হাদীসের উপর আমল করা উচিত হবে না। কেননা এটি না-বোধক আর ঐগুলি হাঁ-বোধক। ‘ইলমে হাদীসের মূলনীতি অনুযায়ী হাঁ-বোধক হাদীস না-বোধক হাদীসের উপর অগ্রাধিকার যোগ্য।
মাযহাবী থিওরীতে বলা হয়েছে, হানাফী ও অন্যদের নিকট যখন হাঁ-সূচক ও না-সূচকের সাথে দ্বন্দ্ব দেখা দিবে তখন না-সূচকের উপর হাঁ-সূচক অগ্রাধিকার পাবে। এরূপ নীতি বলবৎ হয় যদি হা-সূচকের পক্ষে একজনও হয় তবুও। সুতরাং সেখানে বিরাট এক জামা’আত হাঁ-সূচকের পক্ষে সেখানে অন্য কোন প্রশ্নই আসতে পারে না। যেমনটি এ মাসআলার ক্ষেত্রে। সুতরাং দলীল সাব্যস্ত হওয়ার পর গোড়ামী না করাটাই উচিত…………।(হাশিয়া মিশকাত; আলবানী ১/১৫৪, ও যঈফাহ ৫৬৮)
ইমাম বায়হাক্বী, শায়খ আবূল হাসান সিন্দী হানাফী ও ফাক্বীহ আবূ বাকর ইবনু ইসহাক্ব (রহঃ) প্রমূখগণ বলেনঃ বরং ইবনু মাসউদ এমন কিছু বিষয় ভুলে গেছেন যে ব্যাপারে মুসলিমগণ মতভেদ করেনি। যেমনঃ (১) তিনি সমস্ত সাতাবায়ি কিরাম ও মুসলিম উম্মাহর বিপরীতে সূরাহ নাস ও সূরাহ ফালাক্বকে কুরআনের অংশ মনে করতেন না। (২) তিনি তাতবীক অর্থাৎ রুকু’র সময় দু’ হাঁটুর মাঝখানে দু’ হাত জড়ো করে হাঁটু দ্বারা চেপে রাখতে বলতেন। অথচ এরূপ আমাল রহিত হয়ে যাওয়অ এবং তা বর্জন করার উপর সকল আলিমগণ যে একমত হয়েছেন তাও তিনি ভুলে গেছেন। (৩) ইমামের সাথে দু’ জন মুক্তাদী হলে মুক্তাদীদ্বয় কোথায় কিভাবে দাঁড়াবেন তাও তিনি ভুলে গেছেন। তিনি বলতেন, ইমামের বরাবর দাঁড়াতে হবে। অথচ এটা হাদীসের সম্পূর্ণ খেলাফ। (৪) তিনি ভুলে গিয়েছিলেন বিধায় এরূপ বলতেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ঈদুল আযহার দিন ফাজরের সালাত সঠিক সময়ে পড়তেন না বরং ঈদের সালাতের পূর্বে পড়তেন। অথচ এটা সমস্ত মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধ মত। এ ব্যাপারে সমস্ত আলিমগণের ঐক্যমতের কথাও তিনি ভুলে গেছেন। (৫) তিনি ভুলে গেছেন নাবী (সাঃ) ‘আরাফার ময়দানে কী নিয়মে দু’ ওয়াক্ত সালাত একত্রে আদায় করেছেন। ((৬) তিনি সাজদাহর সময় মাটিতে হাত বিছিয়ে রাখতে বলতেন। অথচ এটি হাদীসের পরিপন্থি হওয়ার ব্যাপারে আলিমগণ মতভেদ করেননি বরং একমত পোষন করেছেন, তাও ইবনু মাসউদ ভুলে গেচেন।
অতএব এ সমস্ত ভুল যাঁর হয়েছে, তাঁর সালাতে রফ’উল ইয়াদাইন না করা এবং সে বিষয়ে হাদীস না জানা বা না বলাও ভুলের অন্তর্ভূক্ত। এতে কোন সন্দেহ নেই। তাছাড়া মুহাদ্দিসীনে কিরামের নিকট এ কথা প্রসিদ্ধ যে, ইবনু মাসউদের শেষ বয়সে বার্ধক্যজনিত কারনে স্মৃতি ভ্রম ঘটে। সুতরাং রফ’উল ইয়াদাইন না করার হাদীসটিও সে সবের অর্ন্তভূক্ত হওয়া মোটেই অস্বাভাবিক নয়। (মাওয়াহিবু লাতীফা ১/২৬০, ইমাম বুখারীর জুযউ রাফ’উল ইয়াদাইন, ইমাম যায়লায়ী, হানাফীর নাসবুর রায়হ ৩৯৭-৪০১, ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১৩৪, শারহু মুসনাদে ইমাম আবূ হানিফা ১৪১ পৃঃ, বালাগুল মুবীন ১/২২৯)
রফ’উল ইয়াদাইন না করার এই হাদীস সম্পর্কে ইমাম আহমাদ ইবনুল হাম্বাল (রহঃ), আল্লামা সুয়ূতী (রহঃ), ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহঃ) ও ইমাম শাওকানী (রহঃ) বানোয়াট (মাওযূ) বলেছেন। (তাসহীলূল ক্বারী, আল-ফাওয়ায়িদুল মাওযু’আহ, আল-লাআ-লিল মাসনু’আহ ফিল আহাদীসিল মাওযু’আহ ২/১৯)
আলোচনা আর দীর্ঘ করতে চাচ্ছি না। এমনিতেই পাঠকগণ এতটুকু পড়বেন কি-না সন্দেহ আছে। তার পরেও আপনাদের অনুরোধ করব, পুরাটুকু পড়তে।
=> রফ’উল ইয়াদাইনের পক্ষে জমহুর মুহাদ্দিস, জমহুর ফাক্বীহ ও মুজতাহিদ ইমামগণের অভিমত-
(০১) ইমাম বুখারী ও ইমাম বায়হাক্বী (রহঃ) বলেনঃ মাক্কাহ, মাদীনাহ, হিজাজ, ইয়ামান, সিরিয়া, ইরাক, বাসরাহ, খুরাসান প্রভৃতি দেশের লোকেরা সকলেই রুকু’তে যাওয়ার সময় এবং রুকু’ থেকে মাথা উঠানোর সময় রফ’উল ইয়াদাইন করতেন। (বুখারীর জুযউল ক্বিরআত)
অসংখ্য সহীহ হাদীস ও আসার বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও যারা রফ’উল ইয়াদাইন করেন না তাদের বিরুদ্ধে ইমাম বুখারী (রহঃ) ‘জুযউ রফউল ইয়াদাইন’ নামে একটি স্বতন্ত্র কিতাবই রচনা করেছেন এবং সেখানে এর পক্ষে ১৯৮টি দলীল বর্ণনা করেছেন। অনুরূপভাবে হাদীসের অন্যতম হাফিয তাকীউদ্দিন সুবকী (রহঃ) ও রফ’উল ইয়াদাইনের পক্ষে জুযউ রফউল ইয়াদাইন’ নামে একখানা স্বতন্ত্র কিতাব রচনা করেছেন। সুতরাং মুহাদ্দিসগণের নিকট রফ’উল ইয়াদাইন যে কত বড় গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত তা সহজেই অনুমেয়।
(০২) ইমাম তিরমিযী (রহঃ), ইমাম ইবনু হিব্বান (রহঃ), ইমাম মুহাম্মাদ নাসর (রহঃ), ইমাম বুখারীর উস্তাদ ইমাম ইবনুল মাদীনী (রহঃ), ইবনু আবদুল বার (রহঃ), শাহ ইসমাঈল শহীদ (রহঃ), হাফিয ইবনুল কাইয়্যিম আল জাওযী (রহঃ), আল্লামা নাসিরুদ্দিন আলবানী (রহঃ), শায়খ সালিহ আল-উসাইমিন (রহঃ), স’উদী আরবের প্রাক্তন গ্রান্ড মুফতী শায়খ ‘আবদুল ‘আযীয বিন বায (রহঃ) প্রমূখ মুহাদ্দিসগণ সকলেই রফ’উল ইয়াদাইনের পক্ষে তাদের দলীল সহ মতবাদ ব্যক্ত করেছেন।
আমরা বাংলাদেশের গুটিকতক গরুখাওয়া মুসলমান সোয়াবের আশায় মিলাদ, শবেবরাত, পীর পুজা, উরুস, মাজারের উপর গম্বুজ নির্মাণ, আজানের সময় আঙ্গুলে চুম্বন, প্রত্যেক ফরয নামাজের পর সম্মিলিত মোনাজাত, খতমে খাজেগাঁ, খতমে শবিনা, খতমে ইউনুস, নামাযের পূর্বে মুখে নিয়্যাত উচ্চারণ এসকল বিষয়গুলো নিয়ে এতই মেতে আছি অথচ নামাযের মধ্যে এত বড় একটা আমল ‘রফে’উল ইয়াদাইন’ কে কর্তন করে একেবারে বিতাড়িত করেছি। আর সকলকে বুঝাচ্ছি এটাও ঠিক ওটাও ঠিক!!
আসুন আমরা হিংসা-বিদ্বেষ ছেড়ে সঠিক আকিদার মানদন্ডে নিজেদের আমলকে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করি। আমীন……………
এ ব্যাপারে ইমাম বোখারী ১টি কিতাব লিখেছেন, যার নাম- জুযু রাফুল ইয়াদিন। এ কিতাবে তিনি তাদের বিরোধিতা করেছেন যারা রুকু তে যাওয়ার আগে ও রুকু থেকে উঠার পর রাফুল ইয়াদিন(দু হাত উঠান) করে না।
এই কিতাব তি এখান থেকে ডাউনলোড করতে পারেনঃ http://peace-for-life.com/…/juz-ul-raful-yadin-bangali-tra…/
এবং ইমাম বোখারী আর একটি কিতাব লিখেছেন তাদের বিরদ্ধে যারা ইমামের পিছনে সুরা ফাতিহা পাঠ করে না।
এই কিতাব তি এখান থেকে ডাউনলোড করতে পারেনঃ http://peace-for-life.com/…/juz-ul-qirat-bangali-translated/
--------------------------------------------------------------------------------------------------------------
misconception:-
রফুল ইয়াদাইন এর এই হাদিসটি সুধু এক বার হাত তোলার কথা বলা হয়েছে।
তিরমিযির এ হাদিস টা ২৫৭ নাম্বার প্রমানিত না। তার উপরের ২৫৬ নাম্বার হাদিসেই লিখা।
তো হানাফি ভায়েরা আর দেওবন্দের ভায়েরা হাদিস টা দেখুন বুঝুন তারপর আমল করুন।



Salim narrated from :
his father (Ibn Umar) who said: "I saw Allah's Messenger when he opened the Salat, raising his hands to the level of his shoulders, and (again) when he bowed, and when he raised his head from bowing." In his narration, Ibn Abi Umar added: "And he wuld not raise them between the two prostrations."
[ Same as 255 (above) with a different chain]

GradeSahih (Darussalam)
Reference : Jami` at-Tirmidhi 256
In-book reference : Book 2, Hadith 108
English translation : Vol. 1, Book 2, Hadith 256









 -----------------------------------------------------------------------
Alqamah narrated that :
Abdullah bin Mas'ud said: "Shall I not demonstrate the Salat of Allah's Messenger to you?" Then he offered Salat and he did not raise his hands except while saying the first Takbir."
                 
GradeDa'if (Darussalam)
Reference : Jami` at-Tirmidhi 257
In-book reference : Book 2, Hadith 109
English translation : Vol. 1, Book 2, Hadith 257

Sunday 29 November 2015

প্রশ্ন: সুৎরাবিহীন অবস্থায় একজন মুছল্লীর কতটুকু সামনে দিয়ে অতিক্রম করা যাবে ?


প্রশ্ন: সুৎরাবিহীন অবস্থায় একজন মুছল্লীর কতটুকু সামনে দিয়ে অতিক্রম করা যাবে ??
-----
উত্তর: উক্ত অবস্থায় যরূরী প্রয়োজনে মুছল্লীর সিজদার স্থানের বাহির দিয়ে অতিক্রম করা যাবে।
(বুখারী হা/৫০৯, মুসলিম হা/৫০৫)
উক্ত হাদীছে بين يدي المصلي দ্বারা মুছল্লীর সিজদার স্থান পর্যন্ত বুঝানো হয়েছে।
(ইবনু হাজার, ফৎহুলবারী ঐ হাদীছের ব্যাখ্যা দ্রঃ; ফাতাওয়া ওছায়মীন, মাসআলা নং ৬২৪)
-
মসজিদ ছাড়া অন্যত্র একাকী ছালাত আদায়কারী মুছল্লী সামনে সুতরা রেখে ছালাত আদায় করবেন।
(আবুদাঊদ হা/৬৯৮; ছহীহুল জামে‘ হা/৬৪১)।
-
যদি সুতরা না রেখে ছালাত আদায় করেন, তবে তার সিজদার স্থান পর্যন্ত জায়গার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করা যাবে না।
(বুখারী হা/৫১০; মুসলিম হা/৫০৭; মিশকাত হা/৭৭৬)
-
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ কোন বস্ত্তকে সম্মুখে রেখে ছালাত আদায় করবে যা তাকে লোকদের থেকে সুৎরা বা পর্দা স্বরূপ হবে, এমন অবস্থায় তার সম্মুখ থেকে যদি কেউ অতিক্রম করতে চায়, তাহ’লে সে যেন তাকে বাধা দেয়।
(বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৭৭৭ ‘ছালাত’ অধ্যায় ‘সুৎরা’ অনুচ্ছেদ। বিস্তারিত দ্রষ্টব্য; মির‘আতুল মাফাতীহ হা/৭৮৬-এর ব্যাখ্যা; উছায়মীন, আরকানুল ইসলাম ২/৪৯৩ পৃঃ, প্রশ্নোত্তর সংখ্যা ২৬৭)
--------------------------------
দারুল ইফতা
হাদীছ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ
মাসিক আত-তাহরীক প্রশ্নোওর
সহীহ্ ইসলামী জিজ্ঞাসা ভিডিও

Monday 16 November 2015

মাসালায়ে রফ'উ ইয়াদাইনঃ চূড়ান্ত পর্যালোচনা (১ম অংশ)

                                                মাসালায়ে রফউল ইয়াদাইনঃ চূড়ান্ত পর্যালোচনা



                                                              সুলাইমান আল উমাইর



                                                           বিসমিল্লাহির রহমানির রাহিম



আসসালামু আলাইকুম। রফউল ইয়াদাইন সম্পরকে হানাফি মত বা ব্যাখ্যা নিয়ে অনেকেই বর্তমানে এরূপ বলে থাকে যে, হানাফিদের মত বা ব্যাখ্যা সহিহ হাদিস বিরোধী, সাহাবি এবং তাবেয়িদের আমলের পরিপন্থী। এভাবে একদল লোক সাধারন মানুষকে বিভ্রান্তির মধ্যে নিপতিত করছেন। তাদের মধ্যে বরতমান আহলে হাদিসগন অন্যতম।



আরেক দল লোক বিবাদমান দুই মতের লোকদের মধ্যে হানাফিদেরকে এসব বিষয় নিয়ে ইখতিলাফের জন্য দায়ী মনে করেন। কিন্তু এই ইখতিলাফ উপমহাদেশে সর্বপ্রথম শুরু করেন আহলে হাদিসরাই।



১৮৭৯ সালের কথা। যখন মুসলমানরা ছিল ইংরেজদের কবলে পরে নির্যাতিত।সিপাহি বিদ্রহের বেরথতার পরে সবাই যখন ভগ্নহৃদয়, তখন কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দিয়ে বসল লাহোরের মুস্লিম নাম ধারি এক আলেম। তিনি হলেন মাওলানা হোসেন আহমাদ বাটালভি। যাকে বলা হয় আহলে হাদিসদের ব্যারিস্টার। তিনি হানাফিদের টার্গেট করে উপমহাদেশের মুসলমানদের ঐক্য নস্যাৎ করতে একটি লিফলেট প্রচার করল। লিফলেটে এমন ১০ টি আমল তুলে ধরা হল এবং তা সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমান দিতে বলা হল  যার উপর হানাফিরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে আমল করে আসছিল। এই দশটি আমলের মধ্যে রফউল ইয়াদাইন না করার ব্যাপারেও প্রমান চাওয়া হয়েছিল যা সহিহ ও সরিহ হতে হবে। এর উদ্দেশ্য ছিল মুসলমানদের ঐক্য যেন বিনষ্ট হয় আর এর মাধমে ইংরেজদের ডিভাইড অ্যান্ড রুল নীতির প্রতিষ্ঠা করা।যাতে হানাফিদের মাঝে আগুন জলে ওঠে আর ইংরেজরা ভালভাবে দেশ শাসন করতে পারে।মাহমুদ হাসান রহ এর ‘আদিল্লায়ে কামেলা’ নামক গ্রন্থে  বাতালভি সাহেবের ১০ টি চ্যাঁলেঞ্জ এর সমুচিত জবাব প্রদান করা হয়েছে। এই বইটির সহজিকিকরন করে সাইদ আহমাদ পালন পুরি (দা। বা।) ‘তোহফায়ে আহলে হাদিস’ নামক গ্রন্থ হিসেবে প্রকাশ করেছেন যা বর্তমানে বাংলাদেশে পাওয়া যায়।



রফউল ইয়াদাইন না করার হাদিসগুলো আমলি ভাবে মুতাওয়াতির।কিন্তু হাত না উঠানোর হাদিস গুলো অর্থ গতভাবে মুতাওয়াতির।(নায়লুল ফারকাদাইন ফি রফউল ইয়াদাইন)



এর প্রমান ইসলামী বিশের দুই কেন্দ্র তথা মদিনা ও কুফাতে সবার আমল হাত না উঠানর পক্ষে দলিল।

ইমাম মালিক রহ মদিনাবাসির আমল দেখে হাত না উঠানোর হাদিস গ্রহন করেছেন।(বিদায়াতুল মুজতাহিদ ১/১৪৩) । এ থেকে একটি জিনিস বিশেষ ভাবে নজরে পরে যে ইমাম মালিক রহ ইবনে উমার রা এর হাদিসের  প্রতি বেশি জোর দেন,এমনকি মুআত্তা মালিকের বেশিরভাগ হাদিস ই ইবনে উমার রা এর থেকে নাফে রহ এর সুত্রে মালিক রহ বর্ণনা করেছেন। কিন্তু হাত উঠানোর ব্যাপারে মালিক রহ ইবনে উমার রা এর হাদিসকে মাঝহাবে রুপ দেননি।তিনি মদিনাবাসির আমলকে এ ক্ষেত্রে প্রাধান্য দিয়েছেন।



আবার কুফার দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, কুফাই এমন শহর যে শহরে কেউ রফউল ইয়াদাইন করতেন না।

মাওলানা আব্দুল হাই লাখনভি মুয়াত্তা মুহাম্মদ এর টিকায় ইমাম মুহাম্মদ ইবনে নাসর মারয়াযি শাফি রহ এর উধ্রিতি উল্লেখ করেনঃ

“আমরা কোন পুরো শহরবাসী সম্পর্কে এরকম জানি না, যারা সবাই রুকুতে যাওয়ার ও ওঠার সময় রফউল ইয়াদাইন ছেড়ে দিতেন,শুধু কুফাবাসি এরূপ করতেন”।(আত্তালিকুল মুমাজ্জাদ পৃষ্ঠা ৯১)



অর্থাৎ কুফা ছাড়া অন্য সকল শহরে রফুল ইয়াদাইন পক্ষে বিপক্ষে লোক ছিল কিন্তু শুধু কুফার অধিবাসীরাই এমন ছিলেন যেখানে ফকিহ মুহাদ্দিস থেকে শুরু করে  জনসাধারন পরযন্ত কেউই রফুল ইয়াদাইন করতেন না। সাদ ইবনে আবি অয়াক্কাস রা,আব্দুল্ললাহ ইবনে মাসুদ রা,আবু মুসা আসআরি রা থেকে শুরু করে কমপক্ষে ৫০০ সাহাবির বাস ছিল এই কুফা নগরিতে যা সর্বজনস্বীকৃত। আল্লামা আজালি রহঃ এর মতে ১৫০০ সাহাবির কথা উল্লেখ করেছেন এর মধ্যে আবার ৭০ জন বদরি সাহাবি এবং ৩০০ জন বায়াতে রেযঅয়ানের ছিলেন।এরা সবাই শুধু তাকবিরে তাহরিমার সময় হাত উঠাতেন, অন্য কথাও নয়।



রাসুল সাঃ এর ওফাতের পর ইলমের তিনটি কেন্দ্র ছিলঃ ১। মদিনা

                                                                       ২।মক্কা

                                                                       ৩।কুফা

মক্কা মুকাররামার প্রধান শিক্ষক ছিলেন হযরত ইবনে আব্বাস  রা, মদিনায় হযরত ইবনে উমার রা এবং হযরত জায়েদ ইবনে সাবিত রা, এবং কুফায় হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা। (আলা’মুল মুয়াক্কিঈন)



 তাই আল্লমা আনোয়ার শাহ কাশ্মিরি বলেন, ‘এ কথা অনস্বীকার্য যে,যে আমল যে পরিমান অধিক হয় তার রেওয়াআতও  সে পরিমানে হ্রাস পায়। কেননা অবিছিন্ন আমল নিজেই একটি বড় শক্তিশালী দলিল। এবং এক্ষেত্রে রেওয়াআতেরও বেশি প্রয়োজন পরে না’।

হানাফিগণ হাত তোলা প্রমানিত এ কথা অস্বীকার করেন না। কিন্তু যারা বলেন হাত না তোলা হাদিস দ্বারা প্রমানিত নয়,  প্রমানাদির আলোকে হানাফিগণ অবশ্যই তাদের মত খণ্ডন করতে পারেন 



হাত না ওঠানোর রেওয়াআত সমুহের মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধ রেওয়াআত হচ্ছে আলকামা রহঃ এর সুত্রে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা এর হাদিসটি। হাদিসটি নিন্মরুপঃ







১। 



257 - حَدَّثَنَا هَنَّادٌ قَالَ: حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ الأَسْوَدِ، عَنْ عَلْقَمَةَ، قَالَ: قَالَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْعُودٍ: «أَلَا أُصَلِّي بِكُمْ صَلَاةَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ فَصَلَّى، فَلَمْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ إِلَّا فِي أَوَّلِ مَرَّةٍ»



“হযরত আলকামা রহঃ বলেন, হযরত ইবনে মাসুদ রা বলেছেন আমি তোমাদেরকে রাসুল সা এর নামাজ পরে দেখাব কি? একথা বলে তিনি নামাজ পরলেন এবং তাকবিরে তাহরিমা বেতিত কোথাও রফুল ইয়াদাইন করেননি। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৭৪৮, সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-২৫৭, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-১৩০৪, সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৬৪৫,১০২৯(ইফাবা), সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-২৩৬৩, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৩৬৮১}



ইমাম তিরমিযি রহঃ বলেছেন হাদিসটি হাসান।

হাফিয ইবনে হাযার রহঃ একে সহিহ বলেছেন।

দারে কুতনি,ইবনে কাত্তান রহঃ হাদিস্তিকে সহিহ বলেছেন। (দারে কুতনি) 



আর গায়রে মুকাল্লেদ্দের ইমাম ইবনে হাযম রহঃ এই হাদিসকে সহিহ বলেছেন।(আলমুহাল্লা খণ্ড ৪ পৃষ্ঠা ৮৮,আলতালখিসুল হাবির ১/৮৩) 



এ হাদিসের সকল রাবি মুসলিমের মানসম্মত।[আল জাওহারুন নাকি ১/১৩৭]



*আবার অনেকে বলেন,ইমাম তিরমিযি রহঃ আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহঃ এর উক্তি উল্লেখ করেছেন যে, হাত না তোলার ব্যাপারে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা যে বলেছেন,’রাসুল সা নামাযে কেবল একবার রফুল ইয়াদাইন করেছেন তারপর আর করেননি’ এই হাদিসটি প্রতিস্তিত নয় কিন্তু

হাত তোলার ব্যাপারে হাদিসটি সুপ্রমানিত ও প্রতিস্থিত।



এর জবাব হল এই উক্তিটি রফুউ ইয়াদাইন করা শিরোনামে  তিরমিযি রহঃ উল্লেখ করেছেন। আর উক্তিতে যে হাদিসের কথা বলা হয়েছে তা হল অন্য একটি হাদিস।উক্তিতির দিকে লক্ষ্য করুন।যা মাসুদ রা সরাসরি রাসুল সা এর আমল অর্থাৎ মারফু সুত্র থেকে বর্ণনা করছেন। এটি উপরোক্ত হাদিস এর মত নয়।তিরমিযির হাদিসে মাসুদ রা নামাজ পরে দেখিয়েছেন, মুবারক রহঃ এর উক্তিতে এই হাদিসের বর্ণনা নেই যেটিকে তিনি সুপ্রথিস্তিত নয় বলেছেন  এটি হল অই হাদিস যা তাহাবি রহঃ বর্ণনা করেছেন দেখুন তাহাবি শরিফ প্রথম খণ্ড ১২৫৫ নং হাদিস এবং এই হাদিসটি সুপ্রথিস্তিত নয়।  স্বয়ং আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহঃ এর সুত্রে  সুনানে নাসায়িতে আল্কামা রহঃ এর হাদিসটি বরনিত হএছে। তাই মুবারক রহঃ এই হাদিসের কথা বলেননি কেননা তার সুত্রেই এই হাদিস বরনিত আছে দেখুন সুনানে নাসায়ী, হাদীস নং-৬৪৫,১০২৯(ইফাবা)(দরসে তিরমিযি প্রাগুক্ত পৃষ্ঠা ৩৯)



তাই ইমাম তিরমিযি রহঃ আল্কামা সুত্রে প্রাপ্ত হাদিসটি পরবর্তীতে আলাদা শিরোনামে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, ‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. এর (রাফয়ে ইয়াদাইন না করা সংক্রান্ত) হাদীস ‘হাসান’ পর্যায়ে উত্তীর্ণ এবং অনেক আহলে ইলম সাহাবা-তাবেয়ীন এই মত পোষন করতেন। ইমাম সুফিয়ান ছাওরী রহ. ও কুফাবাসী ফকীহগণ এই ফতোয়া দিয়েছেন’।



*এই হাদিস সম্বন্ধে  অনেকে বলেন এই হাদিসের ভিত্তি আসিম ইবনে কুলাইব এর উপর।আর এটা তার একক বিবরন।



এর জবাব হল আসিম ইবনে কুলাইব মুসলিম শরিফের একজন নির্ভরযোগ্য রাবি।[জাইলায়ি ১/২০৭] তাই তার একক বর্ণনা ক্ষতিকর নয়।

মুসলিম শরিফের ৫৩২৯ নং হাদিসের রাবি হলেন আসিম ইবনে কুলায়েব দেখুন নিচে:








আবু হাতিম বলেন,আসিম ইবনে কুলাইব  একজন সালেহ ও সৎ বেক্তি।[তাহযিবুত তাহযিব ৫/৫৫,৫৬]

ইবনে হিব্বান তাকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন, এবং ইবনে মইন ও ইমাম নাসায়ি বলেন, তিনি একজন নির্ভরযোগ্য রাবি।[তাহযিবুত তাহযিব ৫/৫৫,৫৬]



আবু দাউদ রহ বলেন, আসিম ইবনে কুলায়েব ছিলেন কুফাবাসিদের মধ্যে উত্তম বেক্তি।[তাহযিবুত তাহযিব ৫/৫৫,৫৬]





এছাড়া আবু হানিফা রহঃ  হাম্মাদ ইবনে সুলাইমান থেকে ,তিনি ইব্রাহিম নখয়ি থেকে,তিনি ইব্রাহিম রহঃ আসওয়াদ থেকে উক্ত হাদিসটি বরনিত হয়েছে,  দেখুন মুস্নাদে ইমাম আযম আবু হানিফা রহঃ হাদিস নং ৯৭।



*আরেকটি অভিযোগ অনেকে করেন যে, আসঅয়াদ রহঃ এর সাথে আল্কামা রহঃ এর সাক্ষাত প্রমানিত নয়।



এর জবাব হল আব্দুর রহমান ইবনে আসঅয়াদ রহঃ ইব্রাহিম নখই রহঃ এর সমকালীন।আর ইব্রাহিম রহঃ এর শ্রবণ আল্কামা থেকে প্রমানিত।ইমাম মুসলিম এর মতে, বিশুদ্ধতার জন্য সমকালিনতাই যথেষ্ট। তাই এই হাদিসটি মুস্লিমের শর্ত অনুযায়ী সহিহ। তাছাড়া ইমাম আবু হানিফা আসঅয়াদের পরিবর্তে ইব্রাহিম নখয়ি রহঃ থেকে বর্ণনা করেছেন যা উক্ত হাদিসকে সমরথন করে।(দরসে তিরমিযি ২/৪১)



*অনেকে এরকম বলেন যে মাসুদ রা যেরকম রুকুতে তাতবিক রহিত হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে জানতে পারেননি তেমনি হাত উত্তলনের বিষয়েও অজ্ঞ ছিলেন।



এর উত্তরে বলা হবে,  তিনি বছরের পর বছর রাসুল সা এর পেছনে নামাজ আদায় করেছেন,অথচ ইবনে উমার রা তখন শিশুদের কাতারে দাঁড়াতেন।তাই এরূপ প্রমানহিন কথা বলা এক প্রকার ধৃষ্টতা ছাড়া আর কিছুই নয়।



 আল্লামা আহমাদ মহাম্মদ শাকের রহঃ  এই হাদিসের অভিযগ খণ্ডন করতে গিয়ে বলেনঃ

এই হাদিসের সনদ সহিহ। ইবনে হাযমসহ অনেক হাফেযে হাদিস একে সহিহ বলেছেন। অন্নরা এতে যেসব ইল্লত বা ত্রুটি সাব্যস্ত করেছেন সেগুল আদৌ কোন ইল্লতি নয়।(শরহু জামি তিরমিযি ২/৪১) 









আওযাই রহঃ ও আবু হানিফা রহঃ এর বাহাসে ইমাম আবু হানিফা রহঃ তার উক্ত হাদিসের রেওয়াআতকে প্রাধান্য দিয়েছেন রাবিদের ফিকহের ভিত্তিতে। কেননা ফিকহবিদরাই হাদিসের সঠিক মর্ম সম্পর্কে  অবগত। ইমাম তিরমিযি রহ বলেন,হাদিসের আসল অর্থের যথার্থ মর্ম ইসলামী আইনবিদরাই সর্বাধিক জানেন।–(তিরমিযিঃ১/১১৮)   আর আওযাই রহঃ ইবনে উমার রা এর হাদিসকে যেটি সালিম  তার পিতা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা থেকে বর্ণনা করেছেন সনদের স্রেস্থত্তের ভিত্তিতে প্রাধান্য দিয়েছেন।



তাই ইবনে মাসুদ রা হাদিসের সব রাবি ফকিহ। আর হাদিসে মুসালসাল বিল ফুকাহা অন্যান্য হাদিসের তুলনায় অগ্রগণ্য।

অধিকাংশ ফকিহ রফুল ইয়াদাইন করতেন না।



আবু বকর ইবনে আইয়াশ রহঃ বলেনঃ আমি কোন ফকিহ কে কখনও প্রথম তাকবির বেতিত হাত তুলতে দেখিনি।(তাহাবি ১/৪৩১)





আহলে হাদিসদের অভিযোগ, হাদিসটি মালুল এবং  সুফিয়ান সাওরি রহ মুদাল্ললিস।




তাদের অভিযোগ সুফিয়ান সাওরির উস্তাদ আসিম ইবনে কুলায়েব রহ এর আরেক ছাত্র

ইবনে ইদ্রিসের কিতাবে ثُمَّ لَا يَعُودُ এই অতিরিক্ত অংশটি নেই, তাই হাদিসটি মালুল।



আমাদের উলামাদের জবাব এই যে, ইবনে ইদ্রিস থেকে সুফিয়ান সাওরি যে বড় ফকিহ ও ইমাম তা বলাই বাহুল্য।



তাই ভুল হলে ইবনে ইদ্রিসের কিতাবে উল্লেখিত হাদিসের হতে পারে সুফিয়ান সাওরির নয়।



তিনিই শুধু এই অতিরিক্ত কথাটি বর্ণনা করেননি বরং ইমাম আবু হানিফা থেকে এক ভিন্ন সুত্রে 'তারপর পুনরায় আর হাত উত্তোলন করতেন না' কথাটি রয়েছে।[দেখুন মুস্নাদে ইমাম আবু হানিফা ৯৭ নং হাদিস]



এছাড়াও অতিরিক্ত বর্ণনাটি ক্ষতিকর নয় প্রকৃতপক্ষে তিনি উক্ত কথার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেছেন মাত্র।



অতিরিক্ত কথাটা ছারাও আমাদের আমল প্রমানিত হয়।



কেননা তিরমিযির বরননায় আছে 'তিনি শুধু প্রথম বারই দু হাত উত্তোলন করলেন'।[তিরমিযি হাদিস নং ২৫৭]

মানে এরপর আর তা উঠান নি শুধু প্রথমবার উঠিয়েছেন এটা ত বলার অপেক্ষা রাখে না উক্তি দ্বারাই তা পরিষ্কার।

এই কথাটিই নাসাইর সনদে উল্লেখ আছে সুফিয়ান সাওরির বর্ণনায়।



আরেকটি অভিযোগ তিনি(সুফিয়ান সাওরি) তাদলিস করেন যা ইবনে মইন বলছেন। [আবু হাতিম এর আজ্জরাহ অয়াততাদিল ৪/২২৫]



কিন্তু প্রশ্ন হল, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদের হাদিস বর্ণনা করতে গিয়ে সুফিয়ান সাওরি রহ তাদলিস করেছেন তার প্রমান কি? এই হাদিসে তো তাদলিস করা হয় নি। তাদলিসের প্রমান দিন। 





এটা সর্বজন স্বীকৃত কথা যে রাবি সিকাহ ও হুজ্জত তার তাদলিস গ্রহনজজ্ঞ।সুফিয়ান সাওরির মত রাবির বেলায় ত কথাই নেই। তারা ত কথা লুকিয়েছেন, ইবনে মইন রহ সুফিয়ান সাওরি সম্বন্ধে বলেছেন,






সুফিয়ান সাওরি রহ সিকাহ।[ জরাহ তাদিলঃ আবু হাতিম ৪/২২৫]



আরও বলেছেন,






সুফিয়ান রহ আমিরুল মুমিনিন ফিল হাদিস। [ জরাহ তাদিলঃ আবু হাতিম ৪/২২৫]



তাদলীস বলার দ্বারা কি ইয়াহইয়া বিন মাঈন সুফিয়ান সাওরীর বদনাম করতে চাচ্ছেন? না এটা সম্ভব নয়। কারণ যিনি তাকে বলছেন আমীরুল মুমিনীনা ফিল হাদীস, আবার বলছেন সিক্বা। তিনি আবার তাদলীস করার কথা বলে বদনাম করেন কিভাবে? আসলে তাদলীসের অনেক প্রকার আছে। এখানে দোষনীয় তাদলীস উদ্দেশ্য নয়।



আমাদের প্রশ্ন হল যখন সুফিয়ান সাওরি রহ জোরে আমিন বলার হাদিস বর্ণনা করেন তখন তো আপনারা সুফিয়ান রহ কে শুবা রহ এর চেয়েও অধিক স্মরণশক্তির অধিকারি হিসেবে গণ্য করেন অথচ শুবা রহ হাদিস শাস্ত্রে শীর্ষ নেত্রিত্তের অধিকারী, এই তারতম্য আপনারা কিসের ভিত্তিতে করেন?সুফিয়ান রহ সম্বন্ধে আপনাদের অভিযোগ জোরে আমিন বলা বিষয়ে আপনাদের বিরুদ্ধে আমাদের উত্তর, ব্যাপারটা হৃদয়ঙ্গম করুন।







২।





হযরত বারা ইবনে আযিব (রা) বলেন- রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ) যখন নামাজ আরম্ভ করতেন তখন তার হস্তদ্বয় কর্ণদ্বয় পর্যন্ত উত্তোলন করতেন । অতঃপর আর তা করতেন না । [ সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৭৫০, মুসনাদে আবী ইয়ালা, হাদীস নং-১৬৮৯, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৪৫৫ ]



এই হাদিসের ব্যাপারে বলা হয় যে,  হাদিসটিকে দাউদ রহঃ সহিহ নয় বলেছেন।



এর জবাব হল দাউদ রহঃ এই হাদিসটিকে তিনটি সুত্রে বর্ণনা করেছেন।

প্রথম দুটি সুত্রে হাদিসটি নির্ভর করে ইয়াযিদ ইবনে আবু যিয়াদের উপর।

আরেকটি সুত্রে এটি নির্ভরশীল আব্দুর রহমান ইবনে আবু লায়লার উপর।

ইমাম আবু দাউদ প্রথম দুই সুত্রের হাদিস সম্বন্ধে নিরব ছিলেন শুধুমাত্র যেটি আব্দুর রহমান ইবনে আবু লায়ালা থেকে বর্ণিত সেটিকে সহিহ নয় বলেছেন কেননা তিনি দুর্বল।সুতরাং প্রথম দুই সুত্র অনুযায়ী হাদিসটি সহিহ।(দরসে তিরমিযি ২/৪২)



আব্দুর রহমান ইবনে আবি লায়লার হাদিসটিও কমপক্ষে হাসান পর্যায়ের।[ইলাউস সুনান ২/৪২৭]



আবার মুল পাণ্ডুলিপিতে আবু দাউদ এর এই উক্তি নেই। শুধুমাত্র মুজতবায়ি নোসখায় এই মন্তব্বের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তাই এ ব্যাপারে সন্দেহ থেকেই যায় যে এটি দাউদ রহঃ এর উক্তি কিনা।(ইযাহুল মুসলিম ২/১২৪)







শায়খ আলবানী লিখেছেন, والحق أنه حديث صحيح و إسناده صحيح علي شرط مسلم ولم نجد لمن أعله حجة يصلح التعلق بها و رد الحديث من أجلها

অর্থাৎ সত্য কথা হলো,  হাদীসটি সহীহ। হাদীসের সনদ ইমাম মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ। যারা এই হাদীসের উপর অভিযোগ করেছে, তাদের এমন কোন অভিযোগ দেখিনি যা এই হাদীসের উপর আরোপিত হতে পারে এবং যার কারণে হাদীসটি প্রত্যাখ্যাত হবে। [ মেশকাতুল মাসবিহ, তাহকীক, শায়খ আলবানী, খ.১, পৃ.২৫৪।]



আলবানী সাহেব তার আবু দাউদ শরীফের তাহকীকে লিখেছেন, فالحق أنه حديث صحيح ولم نجد في كلماتهم ما ينهض علي تضعيف الحديث অর্থাৎ যারা হাদীসটির উপর অভিযোগ করেছে, তাদের এমন কোন অভিযোগ পাইনি যার দ্বারা হাদীসটি যয়ীফ বলা যাবে। বরং সত্য কথা হলো, হাদীসটি সহীহ। [সহীহু সুনানি আবি দাউদ, পৃ.৩৩৮, হাদীস নং ৭৩৩]



অত:পর, আলবানী সাহেব এই হাদীসের উপর যারা অভিযোগ করেছে, তাদের অমূলক অভিযোগগুলোর উত্তর দিয়েছেন এবং সেগুলো খণ্ডন করেছেন।

আশ্চর্যের বিষয় হলো, আহলে হাদীস আলেম আতাউল্লাহ সাহেব তার তালি’কাতুস সালাফিয়্যা আলান নাসায়ি কিতাবে হাদীসটি সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। এবং বলেছেন, ইনসাফের কথা হলো হাদীসটি সহীহ। (তা’লিকাতুস সালাফিয়্যা আলান নাসায়ি, খ.১, পৃ.১২৩)।



৩।  عن ابن عباس قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ترفع الايدى فى سبعة مواطن، افتتاح الصلاة، واستقبال البيت و الصفا والمروة والموقفين وعند الحجر، (مصنف ابن ابى شيبة، رقم الحديث-2465)



হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ বলেছেন-সাতটি জায়গায় হাত তুলতে হবে, ১-নামাযের শুরুতে। ২-কাবা শরীফের সামনে আসলে। ৩-সাফা পাহাড়ে উঠলে। ৪-মারওয়া পাহাড়ে উঠলে। ৫-আরাফায়। ৬-মুযাদালিফায়। ৭-হাজরে আসওয়াদের সামনে। {মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৪৬৫, আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং-১২০৭২,মাযমাউয জাওয়াএদ ২/১০৩,সুনানে বায়হাকী-৫/৭২-৭৩}



ইমাম তাবরানি মারফু সূত্রে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম নাসায়ি থেকে। ইমাম নাসায়ি থেকে প্রসিদ্ধ আছে যে, তিনি কোন অগ্রহনযোগ্য হাদিস বর্ণনা করেন না, না কোন অনিরভরযোগ্য রাবি থেকে তা বর্ণনা করেন। সুতরাং হাদিসটি গ্রহন যোগ্য।



৪। হাফিয ইবনে হাযার আস্কালানি রহঃ ‘আদ দিরায়া ফি তাখরিযি আহাদিসিল হিদায়া’ তে হযরত আব্বাদ ইবনে যুবায়ের রহঃ এর মারফু রেওয়াআত বর্ণনা করেন,



‘রাসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওআ সাল্লাম যখন নামাজ শুরু করতেন তখন নামাজের শুরুতে হস্তদয় উঠাতেন।অতঃপর নামাজ শেষ করা পর্যন্ত আর হস্তদয় উত্তলন করতেন না।‘[বায়হাকি এই হাদিসটি খিলাফিয়াতে বর্ণনা করেছেন-নাসবুর রায়াহ১/৪০৪] 



শাহ সাহেব রহঃ বলেছেন এর সমস্ত রাবি নির্ভরযোগ্য।কিন্তু যুবায়ের রহঃ তাবীঈ। হাদিসটি মুরসাল। মুরসাল হাদিস আমাদের ও জুমহুরের মতে প্রমান।



৫। قال أخبرني سالم بن عبد الله عن أبيه قال : رأيت رسول الله صلى الله عليه و سلم إذا أفتتح الصلاة رفع يديه حذو منكبيه وإذا أراد أن يركع وبعد ما يرفع رأسه من الركوع فلا يرفع ولا بين السجدتين (مسند الحميدى، أحاديث عبد الله بن عمر بن الخطاب رضي الله عنه، رقم الحديث-614)



অনুবাদ-হযরত সালেম বিন আব্দুল্লাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন-আমি রাসূল সাঃ কে দেখেখি, তিনি যখন নামায শুরু করতেন তখন কাঁধ বরাবর হাত উঠাতেন। আর যখন রুকু করতে চাইতেন এবং রুকু থেকে উঠতেন, তখন হাত উঠাতেন না। দুই সেজদার মাঝেও না। {মুসনাদুল হুমায়দী, হাদীস নং-৬১৪}



৬।আসওয়াদ রহঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-

আমি হযরত ওমর রাঃ-কে দেখেছি, তিনি শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন, পরে করতেন না।রাবি জুবাইর ইবনে আদি রহঃ বলেনঃ এবং আমি ইব্রাহিম রহঃ এবং শাবি রহঃ কেও অনুরুপ করতে দেকেছি। ’ (তাহাবী: ১/১৬৪), ( তহাবি ১/৪৩০ হাদিস নং ১২৬৯ [ইফাবা])



তাহাবি রহঃ বলেনঃ এটা সহিহ হাদিস। যেহেতু এর ভিত্তি হাসান ইবনে আইয়াশ রহঃ এর উপর এবং তিনি নির্ভরযোগ্য প্রামাণ্য ও হুজ্জত রাবি।ইয়াহইয়া ইবনে মইন রহঃ তাকে নিরভরযজ্ঞ বলেছেন। (তাহাবী: ১/১৬৪,,মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ১/২৩৭),( তহাবি ১/৪৩০ হাদিস নং ১২৬৯ [ইফাবা])



আল্লামা যায়লায়ী রহঃ এই হাদীসকে সহীহ বলেছেন। সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রহ. এই বর্ণনার সকল রাবীকে ছিকাহ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন। আলজাওহারুন নাকী গ্রন্থে বলা হয়েছে এই হাদীসের সনদ সহীহ মুসলিমের সনদের মতো শক্তিশালী।



৭। হযরত আলী (রা) নামাযে প্রথম তাকবীরে হাত উঠাতেন এরপর আর হাত উঠাতেন না। (সুনানে বায়হাকী : ২/৮০, তাহাবি ১/৪২৬ হাদিস নং ১২৫৯,৬০)



আল্লামা যায়লায়ী রহ. বর্ণনাটিকে সহীহ বলেছেন। সহীহ বুখারীর বিখ্যাত ভাষ্যকার আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রহ. এই বর্ণনার সকল রাবীকে ছিকাহ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন। সহীহ বুখারীর অপর ভাষ্যকার আল্লামা আইনী রহ. বলেন, “এ সনদটি সহীহ মুসলিমের সনদের সমমানের।

(নাসবুর রায়াহ : ১/৪০৬, উমদাতুল কারী :৫/২৭৪, দিরায়াহ : ১/১১৩)



এছাড়াও, ইবনে ইসহাক রহঃ বলেনঃ ‘ইবনে মাসউদ রা এবং হযরত আলী রা এর শিস্যগন কেবল তাকবিরে তাহরিমা বেতিত হাত উত্তলন করতেন না’। আবি শাইবা এর সনদ সহিহ বলেছেন।(মুসান্নাফে আবি শাইবা ১/১৩৯)



৮।আসওয়াদ রহ. বলেছেন-

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. শুধু প্রথম তাকবীরের সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন, এরপর আর করতেন না।

(জামউল মাসানীদ)



৯।ইব্রাহিম রহঃ বলেনঃ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা সালাতের শুরু বেতিত কোথাও হাত তুলতেন না।(তাহাবি ১/৪২৯ হাদিস নং ১২৬৮,মুসান্নাফে আবি শাইবা ১/২৩৬,মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক ২/৭১)



৯।মুজাহিদ রহ. বলেন-

আমি আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.-এর পিছনে নামায পড়েছি। তিনি প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্য সময় রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন না।

(তাহাবী : ১/১৬৩, ইবনে আবী শাইবা : ২/৪১৮ হাদীছ নং ২৪৬৭ [শায়খ আওয়ামা দা.বা.



তাহক্বীআল্লামা তুরকুমানী রহ. বলেছেন, এ বর্ণনার সনদ সহীহ

(আল-জাওহারুন নাকী)

এর সনদ সহিহ ।[তাহাবি ১/১০৮]



যারা আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রা এর হাদিস দ্বারা দলিল পেশ করেন,তাদের সেই হাদিস এর পরিপন্থী আমল তিনি নিজেই করেছেন, এটা শুধু তখনই সম্ভব যখন তার কাছে রফুল ইয়াদাইন রহিত প্রমানিত হয়।

 ইবনে উমার রা থেকে রফুল ইয়াদাইন বিষয়ে যেসব হাদিস আছে তা অস্পষ্ট।কেননা তার  থেকে বিভিন্ন  রেওয়ায়াত পাওয়া যায়।



বায়হাকি রহঃ খিলাফিয়াতে মালিক রহঃ এর সুত্রে বর্ণনা করেন,ইবনে উমার রা বলেন, রাসুল সা প্রথম তাকবির বেতিত রফুল ইয়াদাইন করতেন না।(নসবুর রায়াহ ১/২১০)



এছাড়া ইমাম মালিক রহঃ  আলমুদানাওয়াতুল কুবরা গ্রন্থে ইবনে উমার রা থেকে মারফু হাদিস উল্লেখ করেছেন যেখানে রফুল ইয়াদাইনের কথা নেই।



এছারা সহিহ বুখারি ১/১০২ এ চার স্থানে ইবনে উমার রা থেকে ,উভয় সিজদার মাঝখানেও(আবু দাউদ ১/১০৮ সুনানে নাসায়ি ১/১৭২০, সিজদায় যাওয়ার সময়,( নাসায়ি ১/১৬৫),প্রতিবার উচু নিচু হয়ার ক্ষেত্রে (ইবনে মাজাহ) রফুল ইয়াদাইন এর বিবরন পাওয়া যায়।

ইমামগন জথা শাফি রহঃ তিন স্থানে গ্রহন করেছেন, অর্থাৎ তিনি রহিতের দিকেই গেছেন, কেননা সিজদা সিজদায় যাওয়ার সময়, ও সিজদা থেকে ওঠার সময় রফুল ইয়াদাইন তিনি রহিত মনে করেন।



 গভির ভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় আস্তে আস্তে নামাজ প্রশান্তির ও স্থিরতার দিকেই  গেছে।  প্রথমে নামজে  কথা বলা জায়েজ ছিল পরবর্তীতে রহিত,এদিক অদিক তাকান জায়েজ ছিল তাও রহিত হয়ে যায়, এভাবে প্রথম দিকে প্রচুর পরিমান রফুল ইয়াদাইন জায়েজ ছিল  তারপর তা হ্রাস করা হয় এবং পাচ স্থানে তা বিধিবদ্ধ হয়ে যায়, তারপর চার, তারপর শুধু তাকবিরের সময় তা অবশিষ্ট থেকে যায়। এর উদ্দেশ্য নামাযে স্থিরতা ও ধিরতা আনয়ন। কেননা কুরআন বলছেঃ ‘আল্লাহর ওয়াস্তে ধিরস্থিরভাবে নামাযে দাড়াও’ 



১০।ইবরাহীম নাখায়ী রহঃ বলেন-

নামাযের শুরু রাফয়ে ইয়াদাইন করার পর অন্য কোথায় রাফয়ে ইয়াদাইন করো না

(জামিউস মাসানীদ : ১/৩৫৩)



১১।মুগিরা রহঃ বলেনঃআমি একবার ইব্রাহিম রহঃ কে অয়ায়িল রা এর হাদিস সম্পর্কে বললাম তিনি নবি করিম সা কে দেখেছেন তিনি সালাতের শুরুতে  এবং রুকুর সময় এবং রুকু থেকে মাথা উথাবার সময় হাত তুলতেন। ইব্রাহিম রহঃ বল্লেন,অয়ায়িল রা তাকে একবার এরূপ করতে দেখে থাকেন তাহলে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ রা তাকে পঞ্চাশ বার এরূপ না করতে দেখেছেন।(তাহাবি ১/৪২৫ ইফাবা) 

এখানে অয়ায়িল ইবনে হুযর রা এর হাদিসের উত্তর দেওয়া হয়েছে।







আরেকটি ব্যাপারে অনেকে বলেন,তাহলে বুখারি রহঃ কি ভুল বলল। তিনি তো রফুল ইয়াদাইন নিয়ে একটি বইই লিখল।

এর উত্তরে বলা হবে,তিনি মুহাদ্দিস ছিলেন,মুফতি বা ফকিহ নন।ইমাম আবু হাফস কাবির রহঃ তাকে ইজতিহাদ করতে নিষেধ করেছিলেন,কিন্তু তিনি ফতোয়া দিলেন, যে শিশুর দুধপান কালিন সময়ে সে যদি কোন বকরির দুধ পান করে তাহলে দুধ সম্পর্ক স্থাপন হয়ে যাবে। এতে করে বুখারার আলেমরা তার উপর অসন্তুষ্ট হন।এ ব্যাপারে দেখুন ফাতহুল কাদিরঃ ৩/৩২০ –কিতাবুর রিযা তারিখুল খামিস ২/৩৮২



আল্লামা ইবনে হাযার মক্কি শাফী রহ আল খাইরাতুন হিসানে ৭০ পৃষ্ঠায় লিখেনঃ ইমাম বুখারি রহ আমিরুল মুমিনিন ফিল হাদিস ছিলেন , কিন্তু ফিকহের ব্যাপারে তিনি অবশ্যই দুর্বল ছিলেন। বস্তুত প্রতিটি শাস্ত্রের ন্যই আলাদা আলাদা মনিষী ছিলেন।

 তাই তিনি  ফিকহের ক্ষেত্রে অনুসরনযোগ্য নন।



এছারাও তিনি শাফি মাজহাবের ছিলেন।[দ্রষ্টব্য-তাবাক্বাতে শাফেয়ীয়্যাহ-৩/২, আল হিত্তাহ-১২১,আল ইনসাফ=৬৭,,আবজাদুল উলুম—৮১০ }

শাফি মাঝহাবে যেহেতু রফুল ইয়াদাইন রয়েছে সেহেতু তিনি এর পক্ষে বাহাস করতেই পারেন।



রফউল ইয়াদাইন নিয়ে সাহাবিদের যুগ থেকেই মতপার্থক্য দেখা যায়। কিন্তু এই ইখতিলাফ ছিল ইখতিলাফে মুবাহ। অর্থাৎ রফউল ইয়াদাইন নিয়ে ইখতিলাফ জায়েজ নাজায়েজ নিয়ে নয় বরং উত্তম অনুত্তম নিয়ে।



 ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. জোরে আমিন বলার প্রসঙ্গে  বলেন, ‘এটা ইখতিলাফে মুবাহর অন্তর্ভুক্ত, যেখানে কোনো পক্ষেরই নিন্দা করা যায় না। যে কাজটি করছে তারও না, যে করছে না তারও না। এটা নামাযে রাফয়ে ইয়াদাইন করা ও না-করার মতোই বিষয়।’

وهذا من الاختلاف المباح الذي لا يعنف فيه من فعله ولا من تركه وهذا كرفع اليدين في الصلاة وتركه

(যাদুল মাআদ ১/৭০, মিসর ১৩৬৯ হি., কুনূত প্রসঙ্গ)



বক্তব্বের শেষে তিনি বললেন যে, রফউল ইয়াদাইন যেমন ইখতিলাফে মুবাহ তেমনি আমিন জোরে বা আস্তে বলার বেপারটিও ইখতিলাফে মুবাহ। এ নিয়ে কোন পক্ষেরই নিন্দা করা যায় না।



ইমাম হুমাম রহঃ বলেনঃ তুমুল তর্ক বাহাসের পর প্রমান সিদ্ধ কথা এই যে উভয় রেওয়াআতি রাসুল সা থেকে প্রমানিত।সুতরাং বইপরিত্তের ক্ষেত্রে, প্রাধান্য দেওয়ার প্রয়োজন পরবে।(ফাতহুল কাদির ১/২৭০)



আনোয়ার কাস্মিরি শাহ বলেনঃ উভয়ক্ষেত্রেই নিরবিছিন্ন ভাবে আমল হয়ে আসছে সাহাবি, তাবীঈ ও তাবে তাবীঈ দের যুগ থেকেই তবে মতপারথক্ক হল কোনটি উত্তম(নাইলুল ফাকাদাইন)



সাঈদ ইবনে জুবাইর রা  রফে ইয়াদাইনের রহস্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেনঃ রফে ইয়াদাইনের উদ্দেশ্য নিছক মানুশের নামাজের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা।(নাইলুল ফারকাদাইন)



 সাহাবি রা এর ব্যাপারে বাড়াবাড়ি থেকে বিরত ছিলেন।



আল্লামা ইবনে আবদুল বার রহ. রাফয়ে ইয়াদাইন সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামের অবস্থান বর্ণনা করেছেন-



হযরত হাসান রা. সাহাবায়ে কেরামের কর্মনীতি সম্পর্কে বলেছেন, ‘তাদের মধ্যে যারা রাফয়ে ইয়াদাইন করতেন তারা রাফয়ে ইয়াদাইন পরিত্যাগকারীদের উপর আপত্তি করতেন না।

এ থেকে বোঝা যায়, রাফয়ে ইয়াদাইন জরুরি কিছু নয়।

(আত-তামহীদ : ৯/২২৬)



স্বয়ং রাসুল সা এর প্রিয় নাতি হাসান রা এর উক্তি থেকেই বঝা যায় রফউল ইয়াদাইন করা বা না করা নিয়ে আপত্তি করার কিছু নেই। কেননা সাহাবি রাদিয়াল্লাহু আনহুম এ ব্যাপারে ইখতিলাফে জড়াননি। কিন্তু বর্তমানে আহলে হাদিস ভাইরা ছাড়াও অনেকে এরকম রএছেন তারা এ ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করেন এটা সাহাবীদের আমলের পরিপন্থী।



এই প্রবন্ধটি রফুল ইয়াদাইন প্রমানিত নয় বলে না, কিন্তু রফুল ইয়াদাইন না করাও প্রমানিত বলে। কিন্তু যারা বলে রফুল ইয়াদাইন না করা প্রমানিত নয়, এবং যারা রফুল ইয়াদাইন না করে আসছেন হঠাৎ তাদের আমল সহিহ কিনা এই বিষয়ে সন্দিহান হয়ে পরেছেন তাদের জন্য আমি এই অধম আল্লাহ তা আলার ইচ্ছায় প্রবন্ধটি লিখলাম,ভুল ভ্রান্তি ক্ষমার চোখে দেখবেন।

আসসালামু আলাইকুম।   [sourse- clicksgis]
more [-]= http://cellectionoffacebook.blogspot.in/2014/01/blog-post_3413.html