Sunday 9 October 2016

সালাতে হাত কোথায় বাধবেন?



সালাতে হাত কোথায় বাধবেন?
video-শায়েখ মোজাফ্ফর বিন মহসিন! https://www.facebook.com/abuanas.ctg/videos/327549754275640/ 

 সালাতে হাত কোথায় বাধবেন?

মোহাম্মদ সাইদুর রহমান

 সহীহ বুখারীর হাদীসে এসেছে;
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ، قَالَ كَانَ النَّاسُ يُؤْمَرُوْنَ أَنْ يَّضَعَ الرَّجُلُ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى ذِرَاعِهِ الْيُسْرَى فِى الصَّلَوةِ، قَالَ أبو حَازِمٍ : لاَ أَعْلَمُ إِلاَّ يَنْمِىْ ذَالِكَ إِلَى النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ
সাহল ইবনু সা’দ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন; ‘লোকদেরকে নির্দেশ দেওয়া হতো যেন তারা ছালাতের সময় ডান হাত বাম হাতের উপরে রাখে। আবু হাযেম বলেন যে, ছাহাবী সাহল বিন সা‘দ এই আদেশটিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিকে সম্পর্কিত করতেন বলেই আমি জানি’। (সহীহুল বুখারী: ৭৪০)

উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের একাধিক সরকারী ও বেসরকারী প্রকাশনা সংস্থা কর্তৃক অনুদিত ও প্রকাশিত বঙ্গানুবাদ বুখারী শরীফে উপরোক্ত হাদীছটির অনুবাদে “ডান হাত বাম হাতের কব্জির উপরে”- লেখা হয়েছে। তারা অনুবাদের মধ্যে ذِرَاعٌ (যিরা) অর্থ ‘কব্জি’ কথাটি যোগ করেছেন। হাদীছের অনুবাদে এভাবে কমবেশী করা ভয়ংকর গর্হিত কাজ। এইসব গর্হিত কাজ বুজার জন্য ذِرَاعٌ (যিরা) শব্দের সঠিক অর্থ জানা ও বুঝার প্রয়োজন।

ذِرَاعٌ (যিরা)- শব্দের শাব্দিক অর্থঃ
ذِرَاعٌ (যিরা) শব্দটি (ذ ر ع) ধাতু থেকে এসেছে। কুরআনের দুই জায়গায় শব্দটি এসেছে। আল-কাহফ, ১৮/১৮ এবং আল-হাক্কাহ, ৬৯/৩২। আরবী-বাংলা অভিধানে ذِرَاعٌ (যিরা) অর্থ এসেছে বাহু, হাত, গজ। আর كَفّ (কাফ) অর্থ এসেছে হাতের তালু, হাতের কব্জি, হাতের থাবা।
ذِرَاعٌ (যিরা) অর্থ কনুই থেকে মধ্যমা আঙ্গুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত দীর্ঘ হাত’ (আল-মু‘জামুল ওয়াসীত্ব)।

ذِرَاعٌ (যিরা) মানে কনুই থেকে মধ্যমা আঙ্গুল পর্যন্ত অংশকে বোঝায়। সেই জন্য আল-হারবী গারীবুল হাদীস (১/২৭৭) এ লিখেছেন যে, “আয-যিরা কনুই এর নিম্ন অংশ থেকে মধ্যমা আঙ্গুলের উপরিভাগের সম্পূর্ণ অংশ”।
তাছাড়া, যিরার এই অর্থ এসেছে লুগাত কিতাবেও, উদাহরণস্বরূপ দেখুন; “লিসান আল-আরাব ৮/৯৩, তাজ উল-উরুস ১/৫২১৭, কিতাব আল-আয়ানঃ ২/৯৬ , আল-মুজাম আল-ওয়াসিতঃ ১/৩১১, তাহযীব আল-লুগাহ; ২/১৮৯, কিতান আল-খুলিয়াত ১/৭৩০, এবং অন্যান্য”।

দারুল উল দেওবন্দের প্রাক্তন শিক্ষক মাওলানা ওয়াহিদ উয-জামান কাসমী আল-কায়রাওনী, লিখেছেন যে, “যিরা মানে; কনুই থেকে মধ্যমা আঙ্গুলের অংশকে বোঝায়।” (কামুস আল যাদীদ, পৃষ্ঠা-৩০৮, কুতুবখানা হোশাইনিয়া দেওবন্দ)

কুরআন ও হাদীসের দলীলঃ

১ম দলীলঃ

একটি হাদীসে দুটি দলীল আছে; ذِرَاع (যিরা) ও (কাফ) كَفّ উভয় শব্দ আছে।
عَنْ أَبِي قَتَادَةَ، قَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا كَانَ فِي سَفَرٍ فَعَرَّسَ بِلَيْلٍ اضْطَجَعَ عَلَى يَمِينِهِ وَإِذَا عَرَّسَ قُبَيْلَ الصُّبْحِ نَصَبَ ذِرَاعَهُ وَوَضَعَ رَأْسَهُ عَلَى كَفِّهِ
আবু কাতাদা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফররত অবস্থায় রাতে ঘুম থেকে জাগ্রত হলে তাঁর ডান কাতে শুয়ে থাকতেন। আর ভোরের কাছাকাছি সময়ে জাগ্রত হলে তাঁর (ذِرَاع) বাহু দাঁড় করিয়ে (كَفّ) হাতের তালুতে ভর রেখে শুয়ে থাকতেন। (সহিহ মুসলিম: ১৪৫১)

এই হাদীসে ذِرَاع (যিরা) বলতে সম্পুর্ণ বাহুকে বুজাচ্ছে। এবং (কাফ) كَفّ বলতে হাতের কব্জি বা হাতের তালুকে বুজাচ্ছে।

২য় দলীলঃ

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ قَالَ اعْتَدِلُوا فِي السُّجُودِ، وَلاَ يَبْسُطْ أَحَدُكُمْ ذِرَاعَيْهِ انْبِسَاطَ الْكَلْبِ
আনাস ইবনু মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন; তোমরা সিজদার মধ্যে (অঙ্গ প্রত্যঙ্গের) ভারসাম্য বজায় রাখ আর তোমাদের কেউ যেন তার (ذِرَاعَيْ) বাহুদ্বয়কে কুকুরের মত বিছিয়ে না দেয়। (সহীহুল বুখারী: ৮২২, ৫৩২; সহিহ মুসলিম: ৯৮৯)

যদি এখানে কব্জি অনুবাদ করি তাহলে অর্থ হবে;
“তোমরা সিজদার মধ্যে (অঙ্গ প্রত্যঙ্গের) ভারসাম্য বজায় রাখ আর তোমাদের কেউ যেন তার কব্জিদ্বয়কে কুকুরের মত বিছিয়ে না দেয়।”
এখন আপনারা মাটিতে কব্জি না রেখে কিভাবে সিজদা করবেন?
অতএব ذِرَاع (যিরা) অর্থ হবে বাহু বা হাত।

৩য় দলীলঃ

রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর গোসলের হাদীসে ذِرَاع (যিরা) শব্দ এসেছে। কুলি করে, নাকে পানি দিয়ে, মুখ-মন্ডল ধৌত করে তারপর আপনি কি দু’হাত কনুই পর্যন্ত ধৌত করবেন নাকি দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করবেন?
عَنْ مَيْمُونَةَ، قَالَتْ وَضَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ وَضَعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَضُوءًا لِجَنَابَةٍ فَأَكْفَأَ بِيَمِينِهِ عَلَى شِمَالِهِ مَرَّتَيْنِ، أَوْ ثَلاَثًا، ثُمَّ غَسَلَ فَرْجَهُ، ثُمَّ ضَرَبَ يَدَهُ بِالأَرْضِ ـ أَوِ الْحَائِطِ ـ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلاَثًا، ثُمَّ مَضْمَضَ وَاسْتَنْشَقَ، وَغَسَلَ وَجْهَهُ وَذِرَاعَيْهِ، ثُمَّ أَفَاضَ عَلَى رَأْسِهِ الْمَاءَ، ثُمَّ غَسَلَ جَسَدَهُ، ثُمَّ تَنَحَّى فَغَسَلَ رِجْلَيْهِ‏.‏ قَالَتْ فَأَتَيْتُهُ بِخِرْقَةٍ، فَلَمْ يُرِدْهَا، فَجَعَلَ يَنْفُضُ بِيَدِهِ‏
মায়মূনা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জানাবাতের গোসলের জন্য পানি রাখলেন, তারপর দু’বার বা তিনবার ডান হাতে বাম হাতের উপর পানি ঢাললেন এবং তাঁর লজ্জাস্থান ধুলেন। তারপর তাঁর হাত মাটিতে বা দেওয়ালে দু’বার বা তিনবার ঘষলেন। পরে তিনি কুলি করলেন ও নাকে পানি দিলেন এবং মুখ ও (ذِرَاعَيْ) দু’ হাত ধুলেন। তারপর তাঁর মাথায় পানি ঢাললেন এবং তাঁর শরীর ধুলেন। একটু সরে গিয়ে তাঁর দুই পা ধুলেন। মায়মূনা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, এরপর আমি একখন্ড কাপড় দিলে তিনি তা নিলেন না, বরং নিজ হাতে পানি ঝেড়ে ফেলতে থাকলেন। (সহীহুল বুখারী : ২৭৪)
এই হাদীস প্রমাণ করছে ذِرَاع (যিরা) মানে ‘কনুই থেকে মধ্যমা আঙ্গুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত দীর্ঘ হাত’।

৪র্থ দলীলঃ
অজুর ক্ষেত্রে মুখ-মন্ডলের পর কি সম্পুর্ণ হাত ধৌত করবেন নাকি কব্জি পর্যন্ত ধৌত করবেন?
عَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ، قَالَ خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم لِيَقْضِيَ حَاجَتَهُ فَلَمَّا رَجَعَ تَلَقَّيْتُهُ بِالإِدَاوَةِ فَصَبَبْتُ عَلَيْهِ فَغَسَلَ يَدَيْهِ ثُمَّ غَسَلَ وَجْهَهُ ثُمَّ ذَهَبَ لِيَغْسِلَ ذِرَاعَيْهِ فَضَاقَتِ الْجُبَّةُ فَأَخْرَجَهُمَا مِنْ تَحْتِ الْجُبَّةِ فَغَسَلَهُمَا وَمَسَحَ رَأْسَهُ وَمَسَحَ عَلَى خُفَّيْهِ ثُمَّ صَلَّى بِنَا
মুগীরা ইবনু শু’বা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজত পূরণের জন্য বের হলেন। (হাজত শেষে) তিনি যখন ফিরে এলেন তখন বদনা নিয়ে আমি তাঁর কাছে গেলাম। আমি তাঁকে পানি ঢেলে দিলাম। তিনি তাঁর উভয় হাত ধুইলেন। তারপর মুখমন্ডল ধুইলেন। তারপর (ذِرَاعَيْ) উভয় বাহু ধোয়ার ইচ্ছা করলেন, কিন্তু জোববায় (অপ্রশস্ততার কারণে) তা আটকে গেল। তিনি জোববার নিচে দিয়ে বের করে উভয় বাহু ধুইয়ে ফেললেন এবং মাথা মাসেহ করলেন ও উভয় মোযার ওপর মাসেহ করলেন। তারপর আমাদের সাথে স্বলাত আদায় করলেন। (সহিহ মুসলিম: ৫১৮)

এই হাদীসও প্রমাণ করছে ذِرَاع (যিরা) মানে ‘কনুই থেকে মধ্যমা আঙ্গুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত দীর্ঘ হাত’।

৫ম দলীলঃ

سَبْعُونَ ذِرَاعًا (সাবউ’না যিরা-‘আ) অর্থ কি হবে সত্তর হাত নাকি সত্তর কব্জি?
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ يَعْرَقُ النَّاسُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يَذْهَبَ عَرَقُهُمْ فِي الأَرْضِ سَبْعِينَ ذِرَاعًا، وَيُلْجِمُهُمْ حَتَّى يَبْلُغَ آذَانَهُمْ
আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্নিত রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন; কিয়ামতের দিন মানুষের ঘাম হবে এমনকি তাদের ঘাম যমীনে সত্তর হাত ছড়িয়ে যাবে এবং তাদের মুখ পর্যন্ত ঘামে নিমজ্জিত হবে; এমনকি কান পর্যন্ত। (সহীহুল বুখারী: ৬৫৩২)

কুরআনের বাণী;
خُذُوهُ فَغُلُّوهُ ثُمَّ الْجَحِيمَ صَلُّوهُ ثُمَّ فِي سِلْسِلَةٍ ذَرْعُهَا سَبْعُونَ ذِرَاعًا فَاسْلُكُوهُ
(ফেরেশতাদেরকে বলা হবে;) ধর ওকে, গলায় বেড়ি পড়িয়ে দাও, অতঃপর নিক্ষেপ কর জাহান্নামে। ‘তারপর তাকে বাঁধ এমন এক শেকলে যার দৈর্ঘ্য হবে সত্তর হাত।’ (আল-হাক্কাহ, ৬৯/৩০-৩২)

কুরআনের আয়াতে সবাই سَبْعُونَ ذِرَاعًا (সাবউ’না যিরা-‘আ) অর্থ করেছে সত্তর হাত। যদি এখানে কব্জি অনুবাদ করি তাহলে কি অনুবাদ হবে? সত্তর কব্জি আর কেউই এ অনুবাদ করেন নাই।

৬ষ্ট দলীলঃ

আদম (আলাইহিস সালাম)-এর দৈর্ঘ্য কত ছিল سِتُّونَ ذِرَاعًا ষাট হাত নাকি ষাট কব্জি? এবং যারা জান্নাতে যাবে তাদের দৈর্ঘ্য হবে আদমের আকৃতিতে। সেটা কত হবে سِتُّونَ ذِرَاعًا ষাট হাত নাকি ষাট কব্জি?
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ خَلَقَ اللَّهُ آدَمَ عَلَى صُورَتِهِ، طُولُهُ سِتُّونَ ذِرَاعًا، فَلَمَّا خَلَقَهُ قَالَ اذْهَبْ فَسَلِّمْ عَلَى أُولَئِكَ النَّفَرِ مِنَ الْمَلاَئِكَةِ جُلُوسٌ، فَاسْتَمِعْ مَا يُحَيُّونَكَ، فَإِنَّهَا تَحِيَّتُكَ وَتَحِيَّةُ ذُرِّيَّتِكَ‏.‏ فَقَالَ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ‏.‏ فَقَالُوا السَّلاَمُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللَّهِ‏.‏ فَزَادُوهُ وَرَحْمَةُ اللَّهِ، فَكُلُّ مَنْ يَدْخُلُ الْجَنَّةَ عَلَى صُورَةِ آدَمَ، فَلَمْ يَزَلِ الْخَلْقُ يَنْقُصُ بَعْدُ حَتَّى الآنَ
আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আল্লাহ তাআলা আদম (আলাইহিস সালাম)-কে তার আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, তার দৈর্ঘ্য ছিল سِتُّونَ ذِرَاعًا ষাট হাত, তিনি তাকে সৃষ্টি করে বলেন: যাও সেখানে উপবিষ্ট ফেরেশতাদের দলকে সালাম কর, খেয়াল করে শোন তারা তোমাকে কি অভিবাদন জানায়, কারণ তাই হচ্ছে তোমার ও তোমার সন্তানের অভিবাদন। তিনি বললেন: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ তারা বলল: السَّلَامُ عَلَيْكَ وَرَحْمَةُ اللَّهِ তারা অতিরিক্ত বলল। সুতরাং যে কেউ জান্নাতে যাবে সে আদমের আকৃতিতে যাবে, আর তারপর থেকে মানুষ ছোট হওয়া আরম্ভ করছে, এখন পর্যন্ত তা হচ্ছে। (সহীহুল বুখারী: ৬২২৭; ৩৩২৬; সহিহ মুসলিম: ৭০৫৫)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ أَوَّلَ زُمْرَةٍ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ عَلَى صُورَةِ الْقَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ عَلَى أَشَدِّ كَوْكَبٍ دُرِّيٍّ فِي السَّمَاءِ إِضَاءَةً، لاَ يَبُولُونَ وَلاَ يَتَغَوَّطُونَ وَلاَ يَتْفِلُونَ وَلاَ يَمْتَخِطُونَ، أَمْشَاطُهُمُ الذَّهَبُ، وَرَشْحُهُمُ الْمِسْكُ، وَمَجَامِرُهُمُ الأَلُوَّةُ الأَنْجُوجُ عُودُ الطِّيبِ، وَأَزْوَاجُهُمُ الْحُورُ الْعِينُ، عَلَى خَلْقِ رَجُلٍ وَاحِدٍ عَلَى صُورَةِ أَبِيهِمْ آدَمَ، سِتُّونَ ذِرَاعًا فِي السَّمَاءِ
আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন; সর্বপ্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের মুখমণ্ডল হবে পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মত উজ্জ্বল। তারপর যে দল তাদের অনুগামী হবে তাদের মুখমণ্ডল হবে আকাশের সর্বাদিক দীপ্তমান উজ্জ্বল তারকার মত। তারা পেশাব করবে না আর পায়খানা করবে না। তাদের থুথু ফেলার প্রয়োজন হবে না এবং তাদের নাক ঝাড়বে না। তাদের চিরুনি হবে স্বর্ণের তৈরি। তাদের ঘাম হবে মেশকের ন্যায় সুগন্ধপূর্ণ। তাদের ধনুচি হবে সুগন্ধযুক্ত চন্দন কাঠের। বড় চক্ষু-বিশিষ্ট হুরগণ হবে তাদের স্ত্রী। তাদের সকলের দেহের গঠন হবে একই। তারা সবাই তাদের আদি-পিতা আদম (আলাইহিস সালাম)-এর আকৃতিতে হবে। উচ্ছতায় তাদের দেহের দৈর্ঘ্য হবে سِتُّونَ ذِرَاعًا ষাট হাত বিশিষ্ট। (সহীহুল বুখারী: ৩৩২৭: সহিহ মুসলিম: ৭০৪২)

হাদীসগুলো দ্বারা প্রমাণ হয় ذِرَاع (যিরা) মানে সম্পুর্ণ এক হাত।

৭ম দলীলঃ

আমরা আল্লাহ দিকে এক বিঘত অগ্রসর হলে মহান আল্লাহ কি ذِرَاعًا (যিরা‘আ) অর্থাৎ এক হাত অগ্রসর হবেন নাকি এক কব্জি অগ্রসর হবে?
عَنْ أَبِي ذَرٍّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ يَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ مَنْ جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا وَأَزِيدُ وَمَنْ جَاءَ بِالسَّيِّئَةِ فَجَزَاؤُهُ سَيِّئَةٌ مِثْلُهَا أَوْ أَغْفِرُ وَمَنْ تَقَرَّبَ مِنِّي شِبْرًا تَقَرَّبْتُ مِنْهُ ذِرَاعًا وَمَنْ تَقَرَّبَ مِنِّي ذِرَاعًا تَقَرَّبْتُ مِنْهُ بَاعًا وَمَنْ أَتَانِي يَمْشِي أَتَيْتُهُ هَرْوَلَةً وَمَنْ لَقِيَنِي بِقُرَابِ الأَرْضِ خَطِيئَةً لاَ يُشْرِكُ بِي شَيْئًا لَقِيتُهُ بِمِثْلِهَا مَغْفِرَةً
আবু যার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন; আল্লাহ রাববুল আলামীন ইরশাদ করেছেন; যে ব্যক্তি একটি নেক কাজ করবে তার জন্য রয়েছে দশগুন পূরস্কার; আর আমি তাকে আরও বাড়িয়ে দেব। অ্যর যে ব্যক্তি একটি মন্দ কাজ করবে তার প্রতিফল সেই কাজের অনুরুপ কিংবা আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। যে ব্যক্তি আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয় আমি তার দিকে ذِرَاعًا এক হাত এগিয়ে আসি। আর যে ব্যক্তি আমার দিকে ذِرَاعًا এক হাত অগ্রসর হয় আমি তার দিকে এক গজ এগিয়ে আসি। যে ব্যক্তি আমার কাছে হেঁটে আসে আমি তার দিকে দৌড়িয়ে আসি। যে ব্যক্তি আমার কাছে পৃথিবী সমান গোনাহ করে এবং আমার সংগে কাউকে শরীক করে নাই আমি তার সংগে অনুরুপ তুল্য মাগফিরাত নিয়ে সাক্ষাৎ করি। (সহিহ মুসলিম: ৬৭২৬)

এ হাদীস প্রমাণ করছে ذِرَاع (যিরা) মানে সম্পুর্ণ এক হাত।
ব্যতিক্রমঃ
চতুষ্পদ জন্তুর ক্ষেত্রে ذِرَاعِ (যিরা) অর্থ সামনের পা। যা সুরা আরাফের ১৮ নং আয়াত ও হাদীসে পাওয়া যায়।
وَتَحْسَبُهُمْ أَيْقَاظًا وَهُمْ رُقُودٌ ۚ وَنُقَلِّبُهُمْ ذَاتَ الْيَمِينِ وَذَاتَ الشِّمَالِ ۖ وَكَلْبُهُمْ بَاسِطٌ ذِرَاعَيْهِ بِالْوَصِيدِ ۚ لَوِ اطَّلَعْتَ عَلَيْهِمْ لَوَلَّيْتَ مِنْهُمْ فِرَارًا وَلَمُلِئْتَ مِنْهُمْ رُعْبًا
তুমি তাদেরকে মনে করতে জাগ্রত, অথচ তারা ছিল ঘুমন্ত, আমি তাদেরকে পার্শ্ব পরিবর্তন করাতাম ডানে ও বামে এবং তাদের কুকুর ছিল সামনের পা দুটি গুহাদ্বারে প্রসারিত করে। যদি তুমি উঁকি দিয়ে তাদেরকে দেখতে, তবে পেছন ফিরে পলায়ন করতে এবং তাদের ভয়ে আতংক গ্রস্ত হয়ে পড়তে। (আল-কাহফ, ১৮/১৮)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَوْ دُعِيتُ إِلَى ذِرَاعٍ أَوْ كُرَاعٍ لأَجَبْتُ، وَلَوْ أُهْدِيَ إِلَىَّذِرَاعٌ أَوْ كُرَاعٌ لَقَبِلْتُ
আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন; যদি আমাকে হালাল পশুর পায়া খেতে আহবান করা হয়, তবু তা আমি গ্রহণ করব আর যদি আমাকে পায়া হাদিয়া দেওয়া হয়, তবে আমি তা গ্রহণ করবো। (সহীহুল বুখারী: ২৫৬৮, ৫১৭৮)

عَمْرِو بْنِ أُمَيَّةَ، أَنَّ أَبَاهُ، قَالَ رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَأْكُلُ ذِرَاعًا يَحْتَزُّ مِنْهَا، فَدُعِيَ إِلَى الصَّلاَةِ فَقَامَ فَطَرَحَ السِّكِّينَ، فَصَلَّى وَلَمْ يَتَوَضَّأْ‏
আমর ইবনু উমাইয়্যা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি দেখলাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বকরির) সামনের রানের গোশত কেটে খাচ্ছেন, এমন সময় তাঁকে স্বলাতের জন্য ডাকা হল। তখনই তিনি ছুরি রেখে দিয়ে উঠে গেলেন ও স্বলাত আদায় করলেন, কিন্তু এজন্য নতুন উযু করেননি। (সহীহুল বুখারী: ৬৭৫)

এবার মুল আলোচনায় আসা যাক; সালাতে হাত কোথায় বাধবেন?

১ম দলীলঃ
বুখারীর সহীহ হাদীস পুনরায় উল্লেখ করলাম;
عَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ، قَالَ كَانَ النَّاسُ يُؤْمَرُوْنَ أَنْ يَّضَعَ الرَّجُلُ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى ذِرَاعِهِ الْيُسْرَى فِى الصَّلَوةِ، قَالَ أبو حَازِمٍ : لاَ أَعْلَمُ إِلاَّ يَنْمِىْ ذَالِكَ إِلَى النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ
সাহল ইবনু সা’দ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন; ‘লোকদেরকে নির্দেশ দেওয়া হতো যেন তারা ছালাতের সময় ডান হাত বাম হাতের উপরে রাখে। আবু হাযেম বলেন যে, ছাহাবী সাহল বিন সা‘দ এই আদেশটিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দিকে সম্পর্কিত করতেন বলেই আমি জানি’। (সহীহুল বুখারী: ৭৪০)

পুর্বে উল্লেখিত কুরআনের আয়াত এবং হাদীসের দলীলের আলোকে স্পষ্ট যে, ذِرَاعٌ (যিরা) মানে কনুই থেকে মধ্যমা আঙ্গুলের অগ্রভাগ পর্যন্ত দীর্ঘ হাত। মূলতঃ মধ্যমা আঙ্গুল থেকে কনুই পর্যন্ত পুরো ডান হাত বাম হাতের উপরে রাখলে উভয় হাতই বুকের উপরই চলে আসে। এমতাবস্থায় হাত নাভীর নীচে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। এইভাবে হাত রেখে নাভীর নীচে স্থাপন করতে চাইলে মাজা বাঁকা করে নাভীর নীচে হাত নিয়ে যেতে হবে, যা উচিত নয়।

২য় দলীলঃ
নিম্নোক্ত রেওয়ায়াত সমূহে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা এসেছে হাত বুকের উপর রাখতে হবে।
عَنْ طَاوُسٍ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يَضَعُ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى يَدِهِ الْيُسْرَى ثُمَّ يَشُدُّ بَيْنَهُمَا عَلَى صَدْرِهِ وَهُوَ فِي الصَّلَاةِ
ত্বাঊস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বলাতের মধ্যে তাঁর ডান হাত বাম হাতের উপর রাখতেন এবং উভয় হাত বুকের উপর শক্ত করে ধরে রাখতেন। [আবু দাঊদ হা/৭৫৯, সনদ সহিহ]
উল্লেখ্য যে, উক্ত হাদীছকে অনেকে নিজস্ব গোঁড়ামী ও ব্যক্তিত্বের বলে যঈফ বলে প্রত্যাখ্যান করতে চান। মুহাদ্দিছগণের মন্তব্যের তোয়াক্কা করেন না। নিজেকে শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিছ বলে পরিচয় দিতে চান অথচ আলবানী উক্ত হাদীছ উল্লেখ করে বলেন,
رَوَاهُ أَبُوْ دَاوُدَ بِإِسْنَادٍ صَحِيْحٍ عَنْهُ
‘আবুদাঊদ ত্বাঊস থেকে এই হাদীছকে সহিহ সনদে বর্ণনা করেছেন’। অতঃপর তিনি অন্যের দাবী খন্ডন করে বলেন,
وَهُوَ وَإِنْ كَانَ مُرْسَلاً فَهُوَ حُجَّةٌ عِنْدَ جَمِيْعِ الْعُلَمَاءِ عَلَى اخْتِلاَفِ مَذَاهِبِهِمْ فِى الْمُرْسَلِ لِأَنَّهُ صَحِيْحُ السَّنَدِ إِلَى الْمُرْسَلِ وَقَدْ جاَءَ مَوْصُوْلاً مِنْ طُرُقٍ كَمَا أَشَرْنَا إِلَيْهِ آنِفًا فَكاَنَ حُجَّةً عِنْدَ الْجَمِيْعِ.
‘ত্বাউস যদিও মুরসাল রাবী তবুও তিনি সকল মুহাদ্দিছের নিকট দলীল যোগ্য। কারণ তিনি মুরসাল হলেও সনদের জন্য সহিহ। তা ছাড়াও এই হাদীছ মারফূ‘ হিসাবে অনেক গুলো সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। যেমনটি আমি এই মাত্রই উল্লেখ করলাম। অতএব তা সকল মুহাদ্দিছের নিকট দলীলযোগ্য। [ইরওয়াউল গালীল ২/৭১ পৃঃ।]
এছাড়াও এই হাদীছকে আলবানী সহিহ আবু দাঊদে উল্লেখ করেছেন। [সহিহ আবু দাঊদ হা/৭৫৯]

৩য় দলীলঃ
ওয়ায়েল বিন হুজর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
صَلَّيْتُ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَوَضَعَ يَدَهُ الْيُمْنَى عَلَى يَدِهِ الْيُسْرَى عَلَى صَدْرِهِ، رواه ابْنُ خُزَيْمَةَ وَصَحَّحَهُ
‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে ছালাত আদায় করলাম। এমতাবস্থায় দেখলাম যে, তিনি বাম হাতের উপরে ডান হাত স্বীয় বুকের উপরে রাখলেন’। (ছহীহ ইবনু খুযায়মা হা/৪৭৯; আবু দাঊদ হা/৭৫৫, ইবনু মাস‘ঊদ হ’তে; ঐ, হা/৭৫৯)
উপরোক্ত সহীহ হাদীসে বুকের উপরে হাত বাঁধা সম্পর্কে স্পষ্ট বক্তব্য এসেছে। উক্ত হাদীছের টীকায় শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন,
إِسْنَادُهُ ضَعِيْفٌ لِأَنَّ مُؤَمَّلاً وَهُوَ ابْنُ إِسْمَاعِيْلَ سَيِّئُ الْحِفْظِ لَكِنَّ الْحَدِيْثَ صَحِيْحٌ جَاءَ مِنْ طُرُقٍ أُخْرَى بِمَعْنَاهُ وَفِى الْوَضْعِ عَلَى الصَّدْرِ أَحَادِيْثُ تَشْهَدُ لَهُ.
এর সনদ যঈফ। কারণ তা ত্রুটিপূর্ণ। আর তিনি হলেন ইবনু ইসমাঈ। তার স্মৃতি শক্তি দুর্বল। তবে হাদীছ সহিহ। এই হাদীছ অন্য সূত্রে একই অর্থে বর্ণিত হয়েছে। বুকের উপর হাত রাখার আরো যে হাদীছগুলো আছে, সেগুলো এর জন্য সাক্ষ্য প্রদান করে’।
ইমাম শাওকানী বলেন,
وَلاَ شَيْءَ فِي الْبَابِ أَصَحُّ مِنْ حَدِيْثِ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ الْمَذْكُوْرِ فِيْ صَحِيْحِ ابْنِ خُزَيْمَةَ
‘হাত বাঁধা বিষয়ে ছহীহ ইবনু খুযায়মাতে ওয়ায়েল বিন হুজর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীছের চাইতে বিশুদ্ধতম কোন হাদীছ আর নেই’। (নায়লুল আওত্বার ৩/২৫।)
উল্লেখ্য যে, বাম হাতের উপরে ডান হাত রাখা সম্পর্কে ১৮ জন ছাহাবী ও ২ জন তাবেঈ থেকে মোট ২০টি হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। ইবনু আব্দিল বার্র বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এর বিপরীত কিছুই বর্ণিত হয়নি এবং এটাই জমহূর ছাহাবা ও তাবেঈনের অনুসৃত পদ্ধতি। (নায়লুল আওত্বার ৩/২২; ফিক্বহুস সুন্নাহ; কায়রো: ১৪১২/১৯৯২) ১/১০৯।)

৪র্থ দলীলঃ
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ الله عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله إِنَّا مَعْشَرَ الأَنْبِيَاءِ أُمِرْنَا أَنْ نُعَجِّلَ إِفْطَارَنَا وَأَنْ نُؤَخِّرَ سَحُوْرَنَا وَنَضَعَ أَيْمَانَنَا عَلَى شَمَائِلِنَا فِي الصَّلاَةِ.
ইবনু আববাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, নিশ্চয় আমরা নবীদের দল। আমাদেরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে; আমরা যেন দ্রুত ইফতার করি এবং দেরিতে সাহারী করি আর স্বলাতের মধ্যে আমাদের ডান হাত বাম হাতের উপর যেন রাখি। [ইবনু হিববান হা/১৭৬৭; সনদ সহিহ]

উল্লেখ্য যে, ‘নাভির নীচে হাত বাঁধা’ সম্পর্কে আহমাদ, আবুদাঊদ, মুছান্নাফ ইবনু আবী শায়বাহ প্রভৃতি হাদীছ গ্রন্থে চারজন ছাহাবী ও দু’জন তাবেঈ থেকে যে চারটি হাদীছ ও দু’টি ‘আছার’ বর্ণিত হয়েছে, সেগুলি সম্পর্কে মুহাদ্দেছীনের বক্তব্য হ’ল- لاَ يَصْلُحُ وَاحِدٌ مِنْهَا لِلْاِسْتِدْلاَلِ ‘(যঈফ হওয়ার কারণে) এগুলির একটিও দলীল হিসাবে গ্রহণযোগ্য নয়’। (মির‘আতুল মাফাতীহ (দিল্লী: ৪র্থ সংস্করণ, ১৪১৫/১৯৯৫) ৩/৬৩; তুহফাতুল আহওয়াযী ২/৮৯।)
ছালাতে দাঁড়িয়ে মেয়েদের জন্য বুকে হাত ও পুরুষের জন্য নাভীর নীচে হাত বাঁধার যে রেওয়াজ চালু আছে, হাদীছে বা আছারে এর কোন প্রমাণ নেই। (মির‘আত (লাহোর ১ম সংস্করণ, ১৩৮০/১৯৬১) ১/৫৫৮; ঐ, ৩/৬৩; তুহফা ২/৮৩।)

বরং এটাই স্বতঃসিদ্ধ যে, ছালাতের মধ্যকার ফরয ও সুন্নাত সমূহ মুসলিম নারী ও পুরুষ সকলে একই নিয়মে আদায় করবে। (মির‘আত ৩/৫৯ পৃঃ; ফিক্বহুস সুন্নাহ ১/১০৯; নায়লুল আওত্বার ৩/১৯।)

No comments:

Post a Comment