Saturday 23 May 2015

"জানাযার সালাতে সুরা ফাতিহা পড়তে হবে"


"জানাযার সালাতে সুরা ফাতিহা পড়তে হবে"

'ওদের মধ্যে কোন লোকের মৃত্যূ হলে তুমি কখনো তার (জানাযার)সালাত পড়ো না।(সূরা তওবা ৮৪ নং)'
-এ আয়াতে জানাযাকে সালাত বলা হয়েছে।

ঈমাম বুখারী মন্তব্য করেছেন যে,নবী (ছাঃ) কয়েকটি হাদীসে জানাযার সালাত কে‘সালাত’বলে অভিহিত করেছেন অথচ এতে রুকু ও সিজদাহ নেই জানাযার সালাত ফরজে কেফায়া।
(ইবনে মাজাহ হা/১৫২৬, ফিকাহুস সুন্নাহ ১/২৭১,২৭৯,২৮০ পৃষ্ঠা)।

সূরা ফাতিহা পাঠ ছালাতের একটি রুকন। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পড়ে না, তার ছালাত হয় না।
[ইমাম বুখারী উবাদাহ ইবনে ছামিত রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে হাদীছটি বর্ণনা করেন, ‘আযান’ অধ্যায়, হা/৭৫৬; মুসলিম, ‘ছালাত’ অধ্যায়, হা/৩৯৪]

এক্ষেত্রে জানাযার ছালাত এবং অন্য ছালাতের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কেননা জানাযাও এক প্রকার ছালাত। সুতরাং রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাধারণ ঘোষণা, ‘যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পড়বে না, তার ছালাত হবে না’ জানাযার ছালাতকেও অন্তর্ভুক্ত করবে।

ছহীহ বুখারীতে এসেছে,

عَنْ طَلْحَةَ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَوْفٍ قَالَ صَلَّيْتُ خَلْفَ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَلَى جَنَازَةٍ فَقَرَأَ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ قَالَ لِيَعْلَمُوْا أَنَّهَا سُنَّةٌ.

ত্বালহা বিন আব্দুল্লাহ বিন আওফ (রাঃ) বলেন, আমি একদা ইবনু আববাস (রাঃ)-এর পিছনে জানাযার ছালাত আদায় করলাম। তাতে তিনি সূরা ফাতিহা পাঠ করেন। অতঃপর তিনি বলেন, তারা যেন জানতে পারে সূরা ফাতিহা পাঠ করা সুন্নাত।
[ছহীহ বুখারী হা/১৩৩৫, ১/১৭৮ পৃঃ, (ইফাবা হা/১২৫৪, ২/৪০০ পৃঃ), ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৬৫; আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, মিশকাত হা/১৬৫৪, পৃঃ ১৪৫; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৫৬৫, ৪/৫৬ পৃঃ]

অন্য হাদীছে সূরা ফাতিহার সাথে অন্য একটি সূরা পাঠ করার কথা এসেছে,

عَنْ طَلْحَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَوْفٍ قَالَ صَلَّيْتُ خَلْفَ ابْنِ عَبَّاسٍ عَلَى جَنَازَةٍ فَقَرَأَ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ وَسُوْرَةٍ وَجَهَرَ حَتَّى أَسْمَعَنَا فَلَمَّا فَرَغَ أَخَذْتُ بِيَدِهِ فَسَأَلْتُهُ فَقَالَ سُنَّةٌ وَحَقٌّ.

ত্বালহা বিন আব্দুল্লাহ বিন আওফ (রাঃ) বলেন, আমি একদা ইবনু আববাস (রাঃ)-এর পিছনে জানাযার ছালাত আদায় করলাম। তাতে তিনি সূরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরা পাঠ করলেন। তিনি ক্বিরাআত জোরে পড়ে আমাদের শুনালেন। তিনি যখন ছালাত শেষ করলেন তখন আমি তাকে উক্ত বিষয়ে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এটা সুন্নাত এবং হক্ব।
[নাসাঈ হা/১৯৮৭, ১/২১৮ পৃঃ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭৭; আবুদাঊদ হা/৩১৯৮, ২/৪৫৬ পৃঃ]

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ قَرَأَ عَلَى الْجَنَازَةِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ.

ইবনু আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) জানাযার ছালাতে সূরা ফাতিহা পড়েছেন।
[ছহীহ তিরমিযী হা/১০২৬, ১/১৯৮-৯৯ পৃঃ; মিশকাত হা/১৬৭৩, পৃঃ ১৪৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/১৫৮৩, ৪/৬৪ পৃঃ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, ‘জানাযার সাথে গমন ও জানাযার ছালাত’ অনুচ্ছেদ]

উল্লেখ্য, উক্ত হাদীছটি সনদগতভাবে দুর্বল। তবে এর পক্ষে ছহীহ বুখারীতে হাদীছ থাকার কারণে শায়খ আলবানী (রহঃ) এই সনদকে ছহীহ বলেছেন এবং ছহীহ তিরমিযী ও ছহীহ ইবনে মাজার মধ্যে উল্লেখ করেছেন।
[তিরমিযী হা/১০২৬, ১/১৯৯ পৃঃ; ইবনু মাজাহ হা/১৪৯৫, পৃঃ ১০৭, ‘জানাযা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২২]

ইমাম তিরমিযীও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেন,

حَدِيْثُ ابْنِ عَبَّاسٍ حَدِيْثٌ لَيْسَ إِسْنَادُهُ بِذَلِكَ الْقَوِيِّ إِبْرَاهِيْمُ بْنُ عُثْمَانَ هُوَ أَبُو شَيْبَةَ الْوَاسِطِيُّ مُنْكَرُ الْحَدِيْثِ وَالصَّحِيْحُ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَوْلُهُ مِنْ السُّنَّةِ الْقِرَاءَةُ عَلَى الْجَنَازَةِ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ. 

‘ইবনু আববাসের হাদীছের সনদ নির্ভরযোগ্য নয়। এর মাঝে ইবরাহীম বিন ওছমান আছে। আর সে হল আবু শায়বাহ আল-ওয়াসেত্বী। অস্বীকৃত রাবী’। ছহীহ হল, ইবনু আববাস বর্ণিত হাদীছ। তার বক্তব্য হল- ‘জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ করা সুন্নাত’। অতঃপর ইমাম তিরমিযী (রহঃ) নিম্নের হাদীছটি উল্লেখ করেন,

عَنْ طَلْحَةَ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَوْفٍ أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ صَلَّى عَلَى جَنَازَةٍ فَقَرَأَ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ فَقُلْتُ لَهُ فَقَالَ إِنَّهُ مِنْ السُّنَّةِ أَوْ مِنْ تَمَامِ السُّنَّة.

ত্বালহা বিন আব্দুল্লাহ বিন আউফ হতে বর্ণিত, ইবনু আববাস (রাঃ) একদা জানাযার ছালাত পড়ালেন। তাতে তিনি সূরা ফাতিহা পড়েন। আমি তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এটা সুন্নাত অথবা সুন্নাতের পূর্ণতা।
[তিরমিযী হা/১০২৭-এর আলোচনা, ১/১৯৮-৯৯ পৃঃ]

অন্য একটি সূরা পাঠ করা সুন্নাত। (বুখারী, আবূ দাউদ, নাসাঈ হা/১৯৮৭-৮৯)।

عَنْ رَجُلٍ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِىِّ أَنَّ السُّنَّةَ فِى الصَّلاَةِ عَلَى الْجَنَازَةِ أَنْ يُكَبِّرَ الإِمَامُ ثُمَّ يَقْرَأُ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ بَعْدَ التَّكْبِيرَةِ الأُولَى سِرًّا فِىْ نَفْسِهِ ثُمَّ يُصَلِّى عَلَى النَّبِىِّ وَيُخْلِصُ الدُّعَاءَ لِلْجَنَازَةِ فِى التَّكْبِيْرَاتِ لاَ يَقْرَأُ فِىْ شَىْءٍ مِنْهُنَّ ثُمَّ يُسَلِّمُ سِرًّا فِىْ نَفْسِهِ. وَزَادَ الْأَثْرَمُ السُّنَّةُ يَفْعَلُ مَنْ وَرَاءَ الْإِمَامِ مِثْلَ مَا يَفْعَلُ إِمَامُهُمْ.

রাসূল (ছাঃ)-এর জনৈক ছাহাবী থেকে বর্ণিত আছে যে, নিশ্চয় সুন্নাত হল-জানাযার ছালাতে ইমাম তাকবীর দিবেন এবং প্রথম তাকবীরের পর নীরবে মনে মনে সূরা ফাতিহা পাঠ করবেন। অতঃপর বাকী তাকবীরগুলোতে রাসূল (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পড়বেন। তারপর মৃত ব্যক্তির জন্য নির্দিষ্টভাবে দু‘আ করবেন। সেই তাকবীরগুলোতে কোন কিছু পাঠ করবে না। অতঃপর নীরবে সালাম ফিরাবেন। আছরাম অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, ইমাম যা করবেন মুক্তাদীরাও তা-ই করবে।
[বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা হা/৭২০৯; সনদ ছহীহ, ইওয়াউল গালীল হা/৭৩৪; আহকামুল জানাইয, পৃঃ ১২১; বায়হাক্বী, সুনানুছ ছুগরা হা/৮৬৮; ত্বাহাবী হা/২৬৩৯]

عَنِ الزُّهْرِيِّ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا أُمَامَةَ يُحَدِّثُ سَعِيْدَ بْنَ الْمُسَيَّبِ قَالَ مِنَ السُّنَّةِ فِي الصَّلاَةِ عَلَى الْجِنَازَةِ أَنْ تَقْرَأَ بِفَاتِحَةِ الْكِتَابِ ثُمَّ تُصَلِّيَ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ ثُمَّ يُخْلِصَ الدُّعَاءَ لِلْمَيِّتِ حَتَّى يَفْرُغَ وَلاَ تَقْرَأَ إِلاَّ مَرَّةً وَاحِدَةً ثُمَّ تُسَلِّمَ فِيْ نَفْسِكِ.

যুহরী বলেন, আবু উমাম (রাঃ)-কে সাঈদ ইবনু মুসাইয়িব-এর নিকট হাদীছ বর্ণনা করতে শুনেছি যে, জানাযার ছালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ করা সুন্নাত। অতঃপর রাসূল (ছাঃ)-এর উপর দরূদ পাঠ করবে। তারপর মাইয়েতের জন্য একনিষ্ঠচিত্তে দু‘আ করবে। প্রথম তাকবীর ছাড়া অন্য সময়ে কিছু পাঠ করবে না। তারপর তুমি সালাম ফিরাবে।
[মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হা/১১৪৯৭; ইরওয়াউল গালীল হা/৭৩৪-এর আলোচনা দ্রঃ, ৩/১৮১ পৃঃ]

জ্ঞাতব্য : সূরা ফাতিহা না পড়ার আমল মূলতঃ ইরাকের কূফায় আবিষ্কার হয়েছে। ছহীহ সুন্নাহ্র সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই। যেমনটি ইমাম তিরমিযী উল্লেখ করেছেন।
[তিরমিযী হা/১০২৭, ১/১৯৯ পৃঃ-এর আলোচনা দ্রঃ- وَقَالَ بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ لاَ يُقْرَأُ فِى الصَّلاَةِ عَلَى الْجَنَازَةِ إِنَّمَا هُوَ ثَنَاءٌ عَلَى اللهِ وَالصَّلاَةُ عَلَى النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالدُّعَاءُ لِلْمَيِّتِ وَهُوَ قَوْلُ الثَّوْرِىِّ وَغَيْرِهِ مِنْ أَهْلِ الْكُوفَةِ.]

একদা মিসআর ইবনে মাখরামাহ (রাঃ) জানাযার সালাতে প্রথম তাকবীরে সূরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরা উচ্চস্বরে পড়ে বললেন যে, আমি মাসআলা জানি না,তা নয়,বরং আমার ইচ্ছা তোমাদের জানিয়ে দিই যে, এটা সুন্নাত কাজ। (মুহাল্লা ৫/১২৯ পৃষ্ঠা)।

ইমাম নববী (রহঃ) বলেন, ফাতিহা পাঠ শেষে আমীন বলতে হবে। (রওযাতুত ত্বালেবীন ২০১২৫ পৃষ্ঠা)।
আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আছ ও যাবের (রাঃ) জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ করেছেন। (হাকেম ১ম খন্ড ৫৮ পৃষ্ঠা)।

জানাযার সালাতে প্রথম তাকবীরের পর সূরা ফাতিহা পাঠের বিষয়ে রাসূল (ছাঃ) এর নির্দেশের কথা ৩ জন মহিলা সাহাবী (রাঃ) বর্ণনা করেছেন।
১. উম্মে শারীক আনসারীয়া (রাঃ)। (ইবনে মাজাহ ৪র্থ খন্ড ৪৪৫ পৃষ্ঠা)।

২. উম্মে আফিফ নাহদিইয়াহ (রাঃ)। (ত্বাবারানী কবির ২৫ খন্ড ৪৫৯ পৃষ্ঠা)।

৩. আসমা বিনতে ইয়াযীদ ইবনে সাকান আনসারীয়া (রাঃ)। (ত্বাবারানী কবির ২৪ খন্ড ১৬২ পৃষ্ঠা)।

জানাযার সালাতে সূরা ফাতিহা পাঠের স্বপেক্ষ মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ হাদীস ১১৫১১ হতে ১১৫২১ মোট ১১ টি বর্ণনা এসেছে। 

উপরোক্ত সমস্ত আলোচনায় এটাই প্রমাণিত হয় যে, জানাযার সালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ ওয়াজিব।

একদল লোক বলেন, সালাতে জানাযায় রুকুও নেই, সাজদাহও নেই, ফলে তা তাওয়াফের অনুরুপ। তাওয়াফ বিশুদ্ধ হওয়ার জন্য সূরা আল ফাতিহা পাঠের প্রয়োজন হয় না, ঠিক তেমনি সালাতে জানাযাও বিশুদ্ধ হবার জন্য সূরা ফাতিহা পাঠের কোন দরকার হয় না। এটা সুস্পষ্ট সহীহ হাদীসের মোকাবিলায় নিছক মনগড়া কিয়াস-যা সম্পূর্ণ নাজায়িয।

তালহা বিন আবদুল্লাহ বিন আউফ (রাঃ) বর্ণিত বুখারীর উল্লিখিত হাদীস ছাড়াও সুনানে নাসাঈ ইত্যাদি গ্রন্থে সালাতে জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠের স্বপক্ষে আরও হাদীস রয়েছে। সুনানে নাসায়ীর হাদীসটি ‘উসমান (রাঃ) হতে বর্ণিত। এ হাদীস সম্পর্কে আল্লামা শায়খ উবায়দুল্লাহ রাহমানী তাঁর মিশকাতের বিখ্যাত ভাষ্যগ্রন্থ ‘মিরআতুল মাফাতীহ’-তে মন্তব্য করেছেন- নাসায়ীতে বর্ণিত আবু উমামাহর হাদীসটির সুত্র বুখারী ও সহীহ মুসলিমের হাদীসের শর্ত ভিত্তিক। হাদীস শাস্ত্রের মহাপন্ডিত যে হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী এ হাদীস সস্পর্কে মন্তব্য করেছেন- হাদীসটির বর্ণনা বিশুদ্ধ।
আল্লামাহ রাহমানী বলেছেন- বাস্তব ও যথার্থ কথা এটি যে, সালাতে জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব।

ইমাম শাফয়ী,ইমাম আহমাদ,ইমাম ইসাহাক(রহঃ) প্রমূখ আয়িম্মায়ে দীন এ বিষয়ে একমত যে, জানাযা অনুষ্ঠানটি সালাতের অন্তর্ভূক্ত আর এটা সু প্রমাণিত যে, সূরা ফাতিহা ব্যতীত কোন সালাতই সহীহ হয় না। হাদীসের এই ব্যবপকতা সাধারণভাবে সকল সালাতের ওপর প্রয়োজন হবে। সালাতে জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ না করা সংক্ষেপে মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত রিওয়ায়াতটি পেশ করা হয়, যার অর্থ হলোঃ
ইবনু মাসউদ(রাঃ)বলেছেন,আমাদের পক্ষে মাইয়েতের জানাযায় কোন কিরআত ও কাওল নির্ধারণ করা হয় নি অর্থাৎ সালাতে জানাযায় কিরআতের স্থান বা সময় সূচি নির্ধারণ করে দেওয়া হয় নি। এই সম্পর্কে আল্লামাহ রাহমানী বলেছেন, ঐ রিওয়াতটি কিরআত না পড়া প্রমাণ করে না। তাছাড়া ইবনে মাসউদ থেকেই পরিষ্কার রিওয়ায়াত আছে তিনি সালাতে জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ করেছেন।
ইবনে মাস’উদ (রাঃ) জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন।(ইবনে আবী শায়বা ৩য় খন্ড ২৯৭ পৃষ্ঠা)।

হানাফী মাযহাবের প্রখ্যাত ফকীহ হসান সার নাবলালী তাঁর রচিত “আল নাজমুল মুস্তাতাব লি হুকমিল রিফাতে ফি সালাতিল জানাযাতে বে উম্মিল কিতাব” নামক গ্রন্থে প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, সালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ না করার চেয়ে, ফাতিহা পাঠ করা বহু গুনে উত্তম।

আল্লামাহ আব্দুল হাই লাক্ষেèৗভী হানাফী তাঁর শরহে বিকায়ার ভাষ্য উমদাতুর রিয়ায়া গ্রন্থে লিখেছেন সালাতে জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ বিষয়ে আবু হানীফার সিদ্ধান্তের চেয়ে ইমাম শাফেঈর সিদ্ধান্তই দলীল হিসাবে অনেক মজবুত। আমাদের হানাফী ফকীহ মন্ডলীর আল্লামাহ সার নাবলালী ইমাম শাফেঈর ফতওয়া পছন্দ করেছেন। কেননা আবু উমামাহ বলেছেন, জানাযার সালাতে সূরা ফাতিহা পাঠ নবী (ছাঃ) এর নির্ধারীত বিধান।(উমদাতুর রিয়ায়া ১ম খন্ড ১৮৯ পৃষ্ঠা)।

কাযী সানাউল্লাহ পানিপথী জীবনের অন্তিমকালে বহু বন্ধু-বান্ধব,আত্মীয়স্বজন, ও পুত্র পরিজনের সামনে শক্তভাবে অসিয়ত রাখেন যে, আমার সালাতে জানাযায় যেন বিপুল মুসল্লীবৃন্দের সমাবেশ ঘটে, আর মুহাম্মদ আলী অথবা হাকীম সুখয়া অথবা পীর মুহাম্মদ আমার জানাযায় পেশ ইমাম হন। বায়াদা তাকবীরে উলা সূরা ফাতিহা হাম খেয়াননদ।(অর্থাৎ তারা যেন প্রথম তাকবীরের পরে সূরা আল ফাতিহা পাঠ করেন। (মালাবুদ্দা মিনহু)।

মাওলানা আশরাফ আলী থানভীর মহাগুরু মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন- ইমাম সাহেব (রহঃ) জানাযার সালাতে ক্বিরআতের নিয়তে কুরআন পাঠ নিষেধ করেছেন, তা দু’আর নিয়তে পাঠ করলে দোষ নেই। অতঃপর তিনি বলেন, যদি ক্বিরআতে নিয়তেও পাঠ করা হয় তাহলেও গুনাহগার হবে না। কেননা হাদীস বিশারদ মুহাদ্দিস মন্ডলীর ও ইমাম শাফিয়ীর গবেষনা মতে সালাতে জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ রাসূলুল্লাহ এর বিধান। কাজেই গুনাহগারও হবে না। (ফাতাওয়া রাশিদীয়া কামিল ২৫৮ পৃষ্ঠা)।

হানাফী ইমাম মুল্লা আলী কারী বলেন, সালাতে জানাযায় দু’আর নিয়তে সূরা ফাতিহা পাঠ মুস্তাহাব। এতে ইমাম শাফিয়ীর শক্ত দলীল ভিত্তিক অভিমতের বিরোধীতা থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।(রদ্দুল মুহতার)।
বড় পীরসাহেব তার বিশ্ব বিশ্রুত গুনিয়াতুত তালেবীনে লিখেছেন- সালাতে জানাযায় তাকবীর বলবে প্রথম তাকবীরে সুরা ফাতেহা পাঠ করবে। কেননা আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, আল্লাহর রাসূল(ছঃ) আমাদের নির্দেশ দান করেছেন, সালাতে জানাযায় যেন সুরা ফাতেহা পাঠকরা হয়। অতঃপর দ্বিতীয় তাকবীরের পর সালাতে তাশাহ্হুদের মত যেন নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করা হয়,
কেননা তাবিয়ী ইমাম মুজাহিদ বলেছেন আমি রাসূল(ছঃ) এর অষ্টাদশ সহচরকে সালাতে জানাযার বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছি, তারা সকলেই বলেছেন, তুমি তাকবীর উচ্চারণ করবে তারপর সুরা আল-ফাতেহা পাঠ করবে। আবার তুমি তাকবীর ধ্বনি উচ্চারন করে নাবী (ছঃ) -এর প্রতি দরুদ পড়বে। অতঃপর আল্লাহু আকবার বল তোমার পছন্দমত মাইয়্যিত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে দোয়া আবৃতি করবে- (গুনিয়াতুত তালেবীন- উর্দু অনুবাদ সহ ১০৫ পৃষ্ঠা)

ইমাম ও মুজতাহিদ মন্ডলীর শিরোমনি শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী লিখেছেন- সলাতে জানাযার বিধান সমূহের মধ্যে সুরা ফাতেহা পাঠ একটি বিধান। যেহেতু সুরা ফাতেহা সর্বপেক্ষা উত্তম ও সবচাইতে পূর্ণাঙ্গ দোয়া যা খোদ আল্লাহতায়ালা তার বান্দাগণকে স্বীয় পবিত্র কিতাবে শিক্ষাদান করেছেন - ( হুজ্জতুল্লাহিল বালিগা- উর্দু অনুবাদ সহ ১২৩ পৃষ্ঠা)

‘ঐ ব্যক্তির কোন সালাত হয়নি, যে সূরা ফাতিহা পাঠ করেননি’। (বুখারী, মুসলিম)। 
‘জানাযার কিছু বিধান’ বইতে উপরোক্ত দু’টি দলীল পেশ করে শাইখ আঃ আঃ ইঃ আঃ ইঃ বাঃ (রহঃ) সাবেক সৌদি সর্বোচ্চ ফতওয়া বোর্ড প্রধান বলেন ‘জানাযায় সূরা ফাতিহা পাঠ করা ওয়াজিব’।
উসাইমীন (রহঃ) একই দলীল পেশ করেছেন। এর সঙ্গে বিদ্বানগনের অনেকে ছোট একটি সূরা পাঠ করা সুন্নাত বলেছেন। (ফতওয়ায়ে আরকানুল ইসলাম ৩৩৯ পৃষ্ঠা)।

ফাতাওয়াহ আলমগীরীর অন্যতম লিখক শাহ আবদুর রহীম দেহলভী হানাফী (রহঃ)-এর অভিমত ও আমল ঃ তিনি ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়তেন এবং জানাযার সালাতেও সূরাহ ফাতিহা পড়তেন।
(আলফাসুল আবেদীন-৬৯ পৃষ্ঠা)।

আল্লামা যাঈলায়ী (রহঃ), আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী (রহঃ),ইমাম কস্তালানী (রহঃ),আল্লামা আবুল হাসান সিন্দি দেওবন্দি (রহঃ),আল্লামা আব্দুল হাই লাখনুবী (রহঃ), শাহ অলিউল্লাহ দেহলভী (রহঃ),প্রতেক্যেই জানাযা সালাতে সুরা ফাতিহা পাঠের কথা বলেছেন।
(নাসবুর রায়া হাশিয়া ২/২৭১পৃঃ,উমদাতুল কারী ৮/৩৫৫, মিরআত ২/৪৭৭,হাশিয়া ইবনে মাজাহ ৪৫৫ পৃঃ, ইমামুল কালাম ২৩৩পৃঃ,হুজ্জাতুল বালেগাহ ২/৩৬পৃঃ)।

No comments:

Post a Comment