Thursday 22 October 2015

3]-সালাতে (নামাযে)কিভাবে দাঁড়াতে হবেঃ



সালাতে (নামাযে)কিভাবে দাঁড়াতে হবেঃ
সালাতে সোজা হয়ে দাঁড়াবার সময় খেয়াল রাখতে হয় যেন দুই পায়ের উপর শরীরে ভার সমানভাবে পড়ে এবং দুই পায়ের মাঝে এমনভাবে ফাঁকা থাকে যাতে উভয় পার্শ্বের মুছল্লীর পায়ের সাথে নিজের গোড়ালী মিলে যায় এবং কাঁধের সাথে কাঁধ লেগে থাকে। (উলামারা জাম’আতে এটাকে ওয়াজিব বলেছেন)।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত,তিনি বলেনঃ রাসূল(ছাঃ)বলেছেন,তোমাদের কেউ যেন সালাত আদায়ের সময় তার জুতা বাম অথবা ডান দিকে না রাখে। অবশ্য তার বাম দিকে যদি কোন লোক না থাকে তবে সেখানে রাখতে পারে। তবে জুতাদ্বয় স্বীয় পায়ের মাঝখানেই রাখা বাঞ্ছনীয়। (আবু দাউদ হা/৬৫৪, অনরুপ হা/৬৫৫)
এই হাদীস দ্বারা একজন সালাতীর পা কতটুকু ফাঁকা রাখতে তার প্রমাণ মেলে। অতএব পুরুষ ও মহিলা মুছল্লী (সালাতী) স্ব স্ব কাতারে দু’পা স্বাভাবিক ফাঁকা করে দাঁড়াতে হবে। শর্ত হচ্ছে কাঁধে কাঁধ,পায়ে পা মিলানো। আর তা করতে গেলে, পা স্বভাবিক রাখতে হবে। অনেকে মত দিয়েছেন পুরুষের দু’পায়ের মাঝে চার আঙ্গুল মহিলাদের দু’পায়ে পা মিলিয়ে দাঁড়াতে হবে এসব অযৌক্তিক, ভিত্তিহীন। উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বোঝা যায় পা কিভাবে ফাঁকা করে দাড়াতে হবে।
আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন যে ব্যক্তি সালাতে নিজের উভয় পা(এক সঙ্গে) মিলিয়ে দাড়ালো সে সুন্নাতের বিরোধিতা করলো।(নাসাঈ হা/ ৮৯৫ ইঃ ফাঃ)।
অনেকে মত দেন মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে পা কম ফাঁকা রাখবে। কিন্তু হাদীসে ছেলে, মেয়েদের ক্ষেত্রে একই শর্ত, ভিন্ন কোন দলীল পাওয়া যায় না। বাস্তব দিকটা দেখেলেও সেটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। জুতা জোড়া পায়ের মাঝখানে রাখতে হবে (প্রয়োজনে)। মেয়েদের পা এবং জুতা আকৃতির দিক থেকে পুরুষদের থেকে প্রাকৃতিক নিয়মে ছোট।(এ বিষয়ে মতের কি প্রয়োজন?)।
যে ব্যক্তি গায়ে গা মিলিয়ে কাতার সোজা করে সালাতে দাঁড়ায় আল্লাহ তাঁর সাথে সম্পর্ক রাখেন। অপরপক্ষে যে সালাতের কাতার সোজা করে না, মধ্যেখানে ফাঁক রেখে দাঁড়ায় আল্লাহ তাঁর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। (নাসাঈ, হাকেম)।
সালাতে কাঁধে কাঁধ ও গিঁটে গিঁট লাগিয়ে দুই জনের মাঝে ফাঁক বন্ধ করা ও কাতার গুলো প্রথম থেকে সিরিয়াল অনুসারে পূরন করা ওয়াজিব। রাসূল(ছাঃ)বলেন‘‘যে ব্যাক্তি দুই জনের ফাঁক বন্ধ করবে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করবেন এবং এর দ্বারা তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন।(সহীহ সনদে ত্বাবারানী আওসাত হা/৫৭৯৭ ,সিলসিলাহ সহিহা হা /১৮৯২ )।
সউদি আরবের সুপ্রিম উলামা কাউন্সিলের সদস্য শেখ সালেহ উসাইমিন বলেছেন, কাতার সোজা করার ব্যাপারে পায়ের গোড়ালীই প্রধান বিবেচ্য বিষয়। গোটা শরীর গোড়ালীর উপর নির্ভরশীল। বিভিন্ন জনের আঙ্গুল বড় ছোট আছে তাই আঙ্গুল কাতার সোজা করার ভিত্তি হতে পারে না। সাহাবায়ে কেরাম গণ একজন আরেকজনের সাথে গোড়ালী মিলিয়ে কাতার সোজা করতেন। (দুরুস ফাতাওয়াহ ফিল হারাম-আল-মাক্কী সালেহ উসাইমিন পৃষ্ঠা নং-৭৫)।
জাবের বিন সামুরা (রাঃ) বলেনঃ রাসূল (ছাঃ) আমাদের কাছে এসে বললেন, ফেরেশতা মন্ডলী যেমন তাদের প্রভূর সামনে কাতার বদ্ধ হয় তোমরা কি তেমন কাতার বদ্ধ হবে না? আমরা জিজ্ঞেস করলামঃ হে আল্লাহর রাসূল! ফেরেশতা মন্ডলী তাদের প্রভূর সামনে কিভাবে কাতার বদ্ধ হয়? তিনি বললেনঃ তারা আগের কাতার গুলো পূর্ণ করে এবং মাঝখানে ফাঁক না রেখে মিলিতভাবে দাড়ায়।(মুসলিম হা/৪৩০)।
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন তোমাদের সালাতের কাতারগুলো সোজা ও সমান্তরাল কর। কেননা কাতার সোজা করা সালাত পূর্ণাঙ্গরুপে আদায় করার অন্তর্ভূক্ত। (বুখারী হা/৭৩৩, মুসলিম হা/৪৩৩)।
অপর বর্ণনায়এসেছেঃ কেননা কাতার সোজা করা সালাত কায়েম করার অন্তর্ভূক্ত।
আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং ফেরেশতাগণ তাদের প্রতি রহমত বর্ষন করেন, যারা কাতারবন্দী হয়ে সালাত আদায় করেন। আর যে ব্যক্তি কাতারের ফাঁক বন্ধ করে দাঁড়ায় আল্লাহ তায়ালা এর বিনিময়ে তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন।(আহমদ, ইবনে মাজাহ হা/৯৯৫, সনদ সহীহ)।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা কাঁধগুলো সমান কর ও ফাঁক বন্ধ কর এবং শয়তানের জন্য কোন জায়গা খালি ছেড়োনা’।‘কেননা আমি দেখি যে, শয়তান ছোট কালো বকরীর ন্যায় তোমাদের মাঝে ঢুকে পড়ে’। (আবু দাউদ হা/৬৬৬-৬৭; মিশকাত হা/১১০২,১০৯৩)।
কাতার সোজা করায় ইমামের করণীয় ঃ
কাতার সোজা করায় ইমামের প্রথম কর্তব্য তাকবীর দেওয়ার আগে মুছল্লীদের টাখনুতে টাখনু ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এবং কাতার সোজা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া। অতঃপর কাতার সোজা হলে তাকবীর দেওয়া। এর বিপরীতে কোন সহীহ বর্ণনা নেই। অথচ এদেশের মসজিদ গুলোতে এর বিপরীত করা হয়। দুই মুছল্লীর মাঝখানে অনেক ফাঁকা করে দাঁড়ায় অথচ এর কোন হাদীস নেই। আর এটাই আমাদের মসজিদগুলোতে করা হয়। যা সুন্নাত বিরোধী।
সুন্নাত হল ইমাম সাহেব মুছল্লীদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বলবেন, কাতার সোজা করুন, কাতার সোজা করুন, কাতার সোজা করুন। (নাসাঈ হা/৮১৩ অনরুপ বুখারী হা/ ৭১৯)
নুমান ইবনু বাশীর রাযি আল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত , তিনি বলেন , রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সমবেত লোকদের দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তিনবার বলেন , তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা কর । আল্লাহর শপথ , অবশ্যই তোমরা তোমাদের কাতারসমূহ সোজা করে দাঁড়াও । অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের অন্তরে মতানৈক্য সৃষ্টি করে দিবেন ।
বর্ণনাকারী নুমান রাযিআল্লাহু আনহু বলেন অতঃপর আমি এক লোকতে দেখলাম , সে তার সঙ্গীর কাঁধের সাথে নিজের কাঁধ , তার হাঁটুর সাথে নিজের হাঁটু এবং গোড়ালির সাথে নিজের গোড়ালি মিলিয়ে দাঁড়াচ্ছে >{হাদীস সহীহ , আবু দাউদ হাদীস নং ৬৬২ , হাদীসের শব্দাবলী তার , তাহকীক আলবানী সহীহ । ইবনু খুযাইমাহ হাদীস নং ১৬০ , তাহকীক ডক্টর মুস্তফা আযমী সানাদ সহীহ । মুসনাদ আহমাদ হাদীস নং ১৮৪৩০ তাহকীক শুআইব আরনাউত্ব হাদীস সহীহ । আহমাদ শাকির বলেন হাদীস নং ৫৭২৪, ১১৯৫০, ১২৭৭৭, ১২৮১৯, ১৩৭১২, ১৩৮৩৫, ১৮৩৪২, ১৮৫২৫, ১৯৫৫৩, এর সানাদ সহীহ । ইবনু হিব্বান হাদীস নং ২১৭৬ তাহকীক শুআইব আরনাউত্ব সানাদ মজবুত । বায়হাকী হাদীস নং ৩৬২ }
নোমান বিন বশীর (রাঃ) বলেন, আমি লোকদেরকে তার সাথীর কাঁধের সাথে কাঁধ এবং পায়ের গোড়ালীর সাথে গোড়ালী মিলিয়ে কাতার সোজা করার ব্যপারে মহানবী (ছাঃ)এর আদেশ পালন করতে দেখেছি। (বুখারী ১/১০০ পৃষ্ঠা, অনুচ্ছেদ ৪৭, আযান অধ্যায়)।
ইবনু হাজার বলেন, নোমান বিন বশীরের বর্ণনার শেষাংশে ‘গোড়ালীর সাথে গোড়ালী’ কথাটি এসেছে। এর দ্বারা পায়ের পার্শ্ব বোঝানো হয়েছে। পায়ের পিছনের অংশ নয়, যেমন অনেকে ধারণা করেন। (ফাতহুল বারী ২/২৪৭ পৃষ্ঠা)।
রাসূল (ছাঃ)কাতারের মাঝখান দিয়ে এক ধার থেকে অন্য ধার পর্যন্ত যেতেন এবং বুক ও কাঁধ স্পর্শ করে কাতার সোজা করার নির্দেশ দিতেন। (আবু দাউদ হা/৬৬৪সনদ হাসান)।
হযরত উমর (রাঃ) জামা‘আতে সালাত আরম্ভের পূর্বে জামা‘আতে সালাতের কাতার সোজা করার জন্য মুছল্লীদের মধ্যে লোক পাঠাতেন। যখন উক্ত ব্যক্তি কাতার সোজার সংবাদ নিয়ে আসতেন তখন সালাত আরম্ভ করতেন। (মুয়াত্তা মালিক)।
হযরত উমর (রাঃ) কাতার সোজা করার উদ্দেশ্যে আবূ উসমান নাহদী (রাঃ) এর পায়ে আঘাত করেছিলেন।
বিল্লাল (রাঃ) যখন কাতার সোজা করতেন তখন মুছল্লীদের পায়ের গাটে চাবুক মেরে মেরে লাইন সোজা করতেন। (ফাতহুল বারী ৩/৭২৪, ইবনে হাজার আসকালীন)।

No comments:

Post a Comment